সব মিলিয়ে প্রায় দুশোটি প্রমাণ আয়তনের বস্তা। তাতে কানায় কানায় ভর্তি প্লাস্টিক, থার্মোকলের প্লেট, কাচের বোতল। এসব পরিবেশ দূষক এতদিন ছড়িয়ে ছিল অযোধ্যার কোলে। গতকাল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সেফ অযোধ্যা হিলস’-এর তত্ত্বাবধানেই চলল সাফাই কর্মসূচি। প্রকৃতির প্রাণ ফেরাতে এপ্রিলের চড়া রোদের মধ্যেই অক্লান্তভাবে ঘাম ঝরালেন পরিবেশকর্মীরা। এ এক অভিনব পদক্ষেপ পুরুলিয়ার।
পিছিয়ে যাওয়া যাক বেশ কিছুদিন। খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল অযোধ্যা। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ছারখার করে দিয়েছিল অযোধ্যার বহু বছরের প্রাচীন অরণ্য। সেদিন পাহাড় বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন গ্রামবাসীরাই। তৈরি হয়েছিল একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। আর সেই গ্রুপের সদস্যরাই অযোধ্যার দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনেন। শুধুমাত্র একটা বিপর্যয়ের মোকাবিলাতেই থেমে থাকতে চাননি কেউ। বরং সকলেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন অযোধ্যার শুশ্রূষার কাজটা। তার ফলশ্রুতিই গতকালের উদ্যোগ।
গ্রামের পরিবেশকর্মীদের পাশাপাশি এদিন কর্মসূচিতে সামিল হয়েছিল এলাকার ছাত্রছাত্রীরাও। দূর-দূরান্ত থেকেই ছুটে এসেছিলেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে এদিন আবর্জনা পরিষ্কারে হাত লাগালেন শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক। ‘সেভ অযোধ্যা হিলস’-এর সদস্য দুর্গাদাশ মহন্তি জানালেন, “সব থেকে আশ্চর্যের ব্যাপার, মেচেদা থেকে এক অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যোগাযোগ করেছিলেন আমাদের সঙ্গে। উনি ভোরের ট্রেনে পুরুলিয়া এসে, সারাটাদিন আমাদের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করে গেলেন।” দুর্গাদাশবাবুর কথাই নতুন করে আশ্বাস যোগাচ্ছিল যেন।
আরও পড়ুন
আবার আগুনের কবলে অযোধ্যা পাহাড়, সত্যিই কি প্রাকৃতিক কারণে?
জানা গেল গতকাল সাফাই কর্মসূচি শুরু হলেও, শুক্রবার রাত থেকেই অযোধ্যায় জড়ো হয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবকরা। সেখানে তাঁবু খাটিয়েই রাত কাটিয়েছেন সকলে। চলেছে একে-অপরের মধ্যে আলাপ-আলোচনা। গোটা কর্মসূচির পরিকল্পনা। তারপর সকাল হতেই চারটি দলে বিভক্ত হয়ে তাঁরা অভিযান চালিয়েছেন ময়ূর পাহাড়, আপার ড্যাম, মার্বেল লেক এবং বামনী ফলস্-এ। সন্ধে ছ’টা পর্যন্ত চলে এই সাফাই কর্মসূচি। আর তাতেই উদ্ধার হয়েছে দুশো বস্তা আবর্জনা।
আরও পড়ুন
এই প্রথম রক্তহীন অযোধ্যা, বুদ্ধ পূর্ণিমায় বন্ধ রইল ‘শিকার উৎসব’
তবে এখানেই শেষ নয়। আজও কোমর বেঁধেই মাঠে নামবেন স্বেচ্ছাসেবকরা। আজ দুপুর পর্যন্ত চলবে এই সাফাই অভিযান। তিনদিন-ব্যাপী এই অভিযানে অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য থাকা-খাওয়ারও বন্দোবস্ত করেছিলেন আয়োজকরা। আর সেই অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল গ্রামের মানুষদের থেকেই।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, শুধু সাফাইতেই কি সমস্যার সমাধান হবে? তার থেকেও তো বেশি প্রয়োজন যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা। সংস্থার সদস্য বাপি মাহাতো বলছিলেন সেই কথাই, “প্রতিবছর প্রচুর আবর্জনা জমা হয়। এত বড়ো এলাকা এভাবে নিয়মিত পরিষ্কার রাখা সম্ভব নয়। মুকুটমণিপুরের দিকে এই ধরণের আবর্জনা ফেলা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। থার্মোকল বা প্লাস্টিক নিয়ে গেলে ফাইনও করে পুলিশ। আমরা জেলাশাসকের কাছে কিছুদিনের মধ্যে আবেদন করব যাতে তেমনই ব্যবস্থা নেওয়া হয় এখানে।”
পুরুলিয়ার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র অযোধ্যা। তাছাড়াও এই পাহাড় জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অজস্র পিকনিক স্পট। মানুষের ভিড় কম হয় না। আর পর্যটকরাই ছড়িয়ে রেখে যান প্লাস্টিক, থার্মোকলের প্লেট, মদের বোতল। তবে দূষণ নিয়ে তেমন কোনো মাথাব্যথাই নেই প্রশাসনের, সেই কথাই বোঝা যাচ্ছিল তাঁর কথা থেকেই। তবে এই উদ্যোগের মাধ্যমেই একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করে দিলেন গ্রামবাসীরা। আগামীদিনে প্রশাসন সত্যিই তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ান কিনা, সেটাই দেখার…
ছবি ঋণ - দুর্গাদাশ মহন্তি
Powered by Froala Editor