“আমি সামান্য সাফাইকর্মী হতে পারি, কিন্তু আপনারাও তার থেকে বেশি কিছু নন।” কাজ থেকে অবসরের আগে এই ভাষাতেই ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে চিঠি লিখে এলেন ইংল্যান্ডের একটি ব্যাঙ্কের সাফাইকর্মী জুলি কৌসিন্স। ৬৫ বছরের জুলি কৌসিন্সের এই চিঠি ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে সামাজিক সাম্যের সুযোগ নিয়েও। জুলি চিঠিতে জানিয়েছেন, অবসরের ঠিক আগেরদিন তাঁকে অফিসে ডেকে অকথ্য ভাষায় অপমান করেন ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। অফিসের বাকি সমস্ত কর্মচারীরাও নীরব দর্শক হয়ে শুনেছিলেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই চিঠিটি লিখেছেন জুলি।
ইংল্যান্ডের সাউথ-অ্যাম্পটনের বাসিন্দা জুলি বিগত ৩৫বছর ধরে সাফাইকর্মীর কাজ করছেন। নানা ব্যাঙ্কের শাখায় চুক্তি ভিত্তিতে কাজ করার পর বিগত ৫বছর ধরে তিনি ছিলেন বিখ্যাত এইচএসবিসি ব্যাঙ্কের একটি শাখায়। এতদিন আনন্দের সঙ্গেই কাজ করতেন। কিন্তু কর্মজীবনের শেষ মুহূর্তের এই অপমান কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি তিনি। তাই কাজ ছেড়ে আসার আগে অফিসের টেবিলে এই চিঠি লিখে রেখে দিয়ে আসেন। জুলির ছেলে সেই চিঠির ছবি পোস্ট করেন সামাজিক মাধ্যমে। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, মায়ের এই সাহসী প্রতিবাদের জন্য তিনি গর্বিত।
ছবিটি পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই নানা স্তরের মানুষ প্রশংসা জানাতে থাকেন। এখনও সমাজের এক শ্রেণির মানুষ অন্যকে অপমান করে আনন্দ পান। অথচ তাঁদের মনে রাখা উচিৎ কোনো কাজই ছোট বা বড়ো নয়। তাই প্রত্যেকের সমান সম্মানের অধিকার আছে। এমনই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজেনদের একটি বড়ো অংশ। জুলি তাঁর চিঠির শেষে জানিয়েছেন, প্রতিটা মানুষের চরিত্র বোঝা যায় তাঁর ব্যবহারেই। তাই এরপর যে সাফাইকর্মী কাজ করতে আসবেন, তাঁকে যেন সম্মান দিতে শেখেন ওই ম্যানেজার। নাহলে আসলে তাঁরই নিচ মানসিকতা প্রকাশ পাবে।
শুধুই রোজগারের জন্য নয়, বরং স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকতেই ৩৫ বছর ধরে কাজ করে গিয়েছেন জুলি। সাত সন্তানকে মানুষ করার দায়িত্বের সঙ্গেই প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রের দায়িত্বও পালন করেছেন। তবু হয়তো কাজে কিছু ভুল করেছিলেন তিনি। জুলির কথায়, অফিসের প্রত্যেক কর্মচারীই কাজে কিছু না কিছু ভুল করেন। কিন্তু তার জন্য সামাজিক মর্যাদার প্রশ্ন তুলে অপমান করা যায় না। একুশ শতকে এসে অন্তত মানুষের এটুকু বোঝার সময় এসেছে।
Powered by Froala Editor