প্রিয়জনের মৃত্যুর মুহূর্তটুকুকে স্মৃতিতে ধরে রাখতে তো সকলেই চান। কিন্তু যাঁদের প্রিয়জন বলে কেউ নেই? সরকারি খাতায় যাঁদের একমাত্র পরিচয় ‘বেওয়ারিশ’? তাঁদের অন্ত্যেষ্টিতে সামান্যই আয়োজন করে থাকে সরকার। তবে এবার ইউরোপের নানা দেশে শুরু হয়েছে এক অভিনব আয়োজন। প্রত্যেক পরিজনহীন মানুষের মৃত্যুর জন্য একটি করে সংজ্ঞাপনমূলক কবিতা লেখার কাজ শুরু করেছেন সরকারি ‘সিটি পোয়েট’-রা(City Poet)। নেদারল্যান্ডস থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে গত ২০ বছরে গোটা ইউরোপেই ছড়িয়ে পড়েছে এই প্রথা।
ইউরোপের প্রায় প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ শহরেই একজন করে ‘সিটি পোয়েট’ থাকেন। মধ্যযুগের সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই রীতি শুরু হলেও আজও তা টিকে আছে। কিন্তু সেই সময় রাজদরবারের সদস্যদের জন্য কবিতা লিখতেন সিটি পোয়েটরা। এখন সেই রীতি নেই। ফলে পদটা থেকে গেলেও কার্যত তার কোনো কাজ নেই। এই জায়গা থেকেই নতুন কিছু করার কথা ভেবেছিলেন নেদারল্যান্ডসের কবি বার্ত ড্রুগ। ২০০১ সালে তিনিই প্রথম শুরু করেন অন্ত্যেষ্টির জন্য কবিতা লেখার কাজ। ড্রুগের কাজ খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয় হয়ে যায় ইউরোপে। সেই বছরই বোস্টন শহরেও শুরু হয় একইরকম উদ্যোগ।
তবে অপরিচিত মানুষদের উদ্দেশ্যে এভাবে স্মরণিকা লেখা যে সহজ কাজ নয়, সেটা বলাই বাহুল্য। অনেক সময় আবার মৃত ব্যক্তিদের কোনো পরিচয়ও জানা যায় না। পরিচয় জানা গেলেও তা যৎকিঞ্চিৎ। ফলে কবিদের কবিতা লেখার আগে তন্ন তন্ন করে খুঁজতে হয় কর্মীপরিচয়ের কাগজ থেকে শুরু করে জীবনবীমার নথি। এমনকি প্রতিবেশী বা পরিচিত মানুষদের সাক্ষাৎকার নিতেও যান তাঁরা। আসলে শহরের সমস্ত মানুষের ভালোবাসা নিয়েই নির্বাচিত হন সিটি পোয়েট। তাই সেই ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ারও দায়িত্ব থেকে যায়। এই বার্তাটাই দিতে চেয়েছিলেন ড্রুগ। আর দেখতে দেখতে ইউরোপ সেই উদ্যোগকে আপন করে নিয়েছে। বর্তমানে এমন এলিজি লেখার জন্য তৈরি হয়েছে লোনলি ফিউনেরাল ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থাও। এমনকি প্রতি বছরের শ্রেষ্ঠ কাজ হিসাবে একজন কবিকে সম্মানও জানায় এই সংস্থা। নিছক সাহিত্যের রস উপভোগের বাইরে বেরিয়ে এভাবেই কবিতাকে সমাজের সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছেন কবিরা।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
হেলেন কেলারের হাতে আঙুল চালিয়ে কবিতা ‘পড়ালেন’ রবীন্দ্রনাথ