আমাজনই হোক কিংবা ইন্দোনেশিয়ার ক্রান্তীয় অরণ্য— গোটা বিশ্বজুড়েই চোখ রাঙাচ্ছে বৃক্ষচ্ছেদন। সমান্তরালভাবে বৃক্ষচ্ছেদনের প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন পরিবেশকর্মীরাও। তবে শুধুই কি অরণ্যনিধন? একইসঙ্গে শহর ও মফঃস্বলেও চলছে গাছ কাটার মহড়া। কিন্তু দেখতে গেলে, তা নিয়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। অথচ, শহর ও শহরতলির নিকটবর্তী গাছ (Citi Trees) অরণ্যের তুলনায় বেশি কার্বন (Carbon) শোষণ করে থাকে। হ্যাঁ, শুনতে খানিকটা অদ্ভুত লাগলেও এমনটাই সত্যি। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে আসছে এমন তথ্যই।
বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের হাত ধরেই সামনে এল এই তথ্য। শুধু শহুরে গাছই নয়, শহরের মাটিও অরণ্য কিংবা গ্রামাঞ্চলের তুলনায় বেশি কার্বন ধরে রাখতে পারে বলেই অভিমত তাঁদের। বিশ্বজুড়ে মোট ৪৮ হাজার অরণ্য এবং সংক্ষিপ্ত বনাঞ্চলের তথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ করেছিলেন বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইকোলজিস্ট লুসি হুটায়রা। সেই তথ্যের বিশ্লেষণ থেকেই সুস্পষ্ট ফুটে উঠছে জলবায়ু পরিবর্তনরোধে শহুরে বনাঞ্চলের গুরুত্ব।
কিন্তু ‘শহুরে’ বৃক্ষদের এই বিশেষত্বের কারণ কী? গবেষকরা জানাচ্ছেন, সাধারণত ঘন ক্রান্তীয় অরণ্যে বেশিরভাগ অঞ্চলেই প্রবেশ করতে পারে না সূর্যালোক। সেখানকার তাপমাত্রাও থাকে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কম। তুলনামূলকভাবে দূষণের কারণে শহরের তাপমাত্রা থাকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার থেকে বেশি। পাশাপাশি শহরাঞ্চলে গাছের ঘনত্ব কম হওয়ায় প্রতিটি বৃক্ষই বেশি সূর্যালোক পেয়ে থাকে। সেই কারণে একদিকে যেমন দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি হয় তাদের, তেমন বেশি সূর্যালোক ও বায়ুমণ্ডলে বেশি কার্বনের আধিক্যে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াও ঘটতে থাকে দ্রুত। সবমিলিয়ে গভীর অরণ্যের বৃক্ষদের তুলনায় গড়ে ৩০ শতাংশ বেশি কার্বন শোষণ করে থাকে এই গাছগুলি। এই ধরনের বনাঞ্চলকে ‘টেরেস্টিয়াল কার্বন সিঙ্ক’ হিসাবেই অভিহিত করেছেন গবেষকরা।
অন্যদিকে শহরে মাটির উষ্ণতাও সাধারণত বেশি থাকে গহীন অরণ্য কিংবা গ্রামাঞ্চলের থেকে। ফলে, বিভিন্ন ছত্রাক, প্ল্যাংটন এবং অন্যান্য অণুজীবের মাধ্যমে মাটিতে শোষিত কার্বন মাটি থেকে বেরিয়ে বায়ুমণ্ডলে মিশতে পারে না। সেখানে জৈব পচনের হারও অনেক কম। ফলে, বাড়তি মিথেন কিংবা কার্বন মনোঅক্সাইড জাতীয় গ্যাস উৎপাদন অনেকটাই কম হয়। যদিও কংক্রিটের আবরণে শহরাঞ্চলের মাটি দ্রুত ঢেকে ফেলায়— এই সুবিধা থেকে অনেকাংশেই বঞ্চিত হয় প্রকৃতি।
আরও পড়ুন
এখনও অনাবিষ্কৃত ৯ হাজারেরও বেশি গাছ, জানাচ্ছে গবেষণা
নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক এই গবেষণাপত্র থেকে এ-কথা স্পষ্ট উঠে আসে, অরণ্যের পাশাপাশি শহরাঞ্চলের বৃক্ষ সংরক্ষণেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে। এই বিষয়টিতেই বেশি করে জোর দিচ্ছেন গবেষকরা। শহরের অভ্যন্তরে অরণ্যায়ন বা বৃক্ষরোপণ করলে সহজেই হারানো সম্ভব জলবায়ু পরিবর্তনকে। এখন দেখার এই নতুন গবেষণাপত্র কত দ্রুত পৌঁছে যায় প্রশাসনিক মহলে…
আরও পড়ুন
আমাজনের গাছের শরীরে বিষাক্ত পারদ, শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা
Powered by Froala Editor