৮০ ও ৯০-এর দশকের বলিউডের সিনেমার মধ্যে আছে এক অদ্ভুত আকর্ষণ। পারিবারিক সিনেমা হোক বা কমেডি অথবা অ্যাকশন ফিল্ম, সব মিলিয়ে যেন মন ছুঁয়ে যায় একেকটি সিনেমা। তবে এইসব সিনেমার নির্মাণের পিছনে থেকেছে বহু মানুষের পরিশ্রম। ঠিক তেমনই একজন ছিলেন ঈশ্বর বিদ্রি। ‘গুলামি’, ‘ইয়াতিম’, ‘হাতিয়ার’-এর মতো সিনেমায় ক্যামেরা ধরেছেন। আবার কার্গিল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত কিংবদন্তি ‘বর্ডার’ সিনেমাটিতেও ক্যামেরা ধরেছেন তিনি। লেন্সে আলোর খেলায় বন্দি করেছেন প্রতিটি দৃশ্য।
কর্ণাটকের বানহাট্টি শহরে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ঈশ্বর বিদ্রির। ছোট থেকেই ক্যামেরার প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল। কিন্তু সেটাই যখন পেশা হিসাবে বেছে নিতে চাইলেন তখন অবাক হলেন পরিবারের সবাই। আপত্তিও জানিয়েছিলেন। কিন্তু এই সময়েই এক বন্ধুকে পেয়ে গেলেন ঈশ্বর। তাঁর নাম জেপি দত্ত। নবীন এই পরিচালক সদ্য প্রযোজক পেয়েছেন তাঁর প্রথম সিনেমার জন্য। কিন্তু অভিনেতা-অভিনেত্রী ছাড়াও তো সিনেমা তৈরির জন্য প্রয়োজন আরও অনেককে। সেই সময়েই এগিয়ে এলেন ঈশ্বর বিদ্রি। ১৯৭৬ সালে তৈরি হল তাঁদের প্রথম সিনেমা ‘শারহাদ’। সেই সিনেমা পর্দায় মুক্তি পায়নি। তবে সেই থেকেই আত্মীয়তার সূত্রে বাঁধা পড়লেন পরিচালক ও চিত্রগ্রাহক। তৈরি হল নতুন একটি পরিবার। সোমবার সকালে ভাঙন ধরল সেই পরিবারেই।
২০ ডিসেম্বর বেলগাঁওতে একটি বিবাহ অনুষ্ঠানের মধ্যে হঠাৎ হৃদযন্ত্রে ব্যাথা শুরু হয় ঈশ্বর বিদ্রির। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকদের মধ্যেও শুরু হয় তৎপরতা। কিন্তু এর মধ্যেই আরও একবার আক্রান্ত হয় তাঁর হৃৎপিণ্ড। শেষ পর্যন্ত সোমবার সকালে মৃত্যু হল কিংবদন্তি চিত্রগ্রাহকের। সামাজিক মাধ্যমে তাঁর মৃত্যুসংবাদ জানিয়েছেন ছেলে সঞ্জীব বিদ্রি। স্বাভাবিকভাবে শোকস্তব্ধ পরিচালক জেপি দত্ত।
জেপি দত্তের সঙ্গেই বলিউডের জগতে আত্মপ্রকাশ ঈশ্বর বিদ্রির। শেষ দিন পর্যন্ত দুজনে একসঙ্গেই কাজ করেছেন। এর মধ্যে তাঁরা উপহার দিয়েছেন ‘ইয়াতিম’, ‘হাতিয়ার’, ‘বাতওয়ারা’ থেকে শুরু করে ‘বর্ডার’-এর মতো সিনেমা। দুজনে মোট ২০টি সিনেমা উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। পাশাপাশি অন্যান্য পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন ঈশ্বর বিদ্রি। এর মধ্যে অবশ্যই বলতে হয় ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রাজকুমার সন্তোষীর সিনেমা ‘আন্দাজ আপনা আপনা’। এছাড়াও রয়েছে অ্যাকশন থ্রিলার ‘ঘটক’, মিউজিক্যাল কমিডি ‘আন্দাজ’-এর মতো সিনেমা। তবে ভারতীয় দর্শকদের মধ্যে চিত্রগ্রাহকরা তেমন জনপ্রিয়তা কোনোদিনই পাননি। তাই এক্ষেত্রেও দর্শকরা তাঁর কাজে মুগ্ধ হলেও অনেক সময়েই লক্ষ করেননি ক্যামেরার পিছনে থাকা মানুষটির নাম। নীরবেই কাজ করে গিয়েছেন, নীরবেই বিদায় নিলেন ঈশ্বর বিদ্রি।
Powered by Froala Editor