সিনেমার সেটে দুর্ঘটনা, প্রপ-গানের গুলিতে নিহত খোদ সিনেম্যাটোগ্রাফার!

ভিলেনের দিকে বন্দুক তাক করে আছেন নায়ক। দুটো ছোট্ট ডায়লগ ফুটে উঠবে তাঁর ঠোঁটে। আর তারপরেই ঝলসে উঠবে সেই বন্দুক। ভিলেনের পিছন থেকে গোটা দৃশ্যটাকে ক্যামেরা বন্দি করছিলেন সিনেম্যাটোগ্রাফার। তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে পরিচালক। ‘ক্যামেরা… রোল… অ্যাকশন…’ ডিরেক্টরের নির্দেশ অনুযায়ী ভিলেনের দিকে ডায়লগ ছুঁড়ে দিয়ে ট্রিগারে আঙুল চাপলেন নায়ক। খানিক আর্তনাদ করে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লেন ভিলেনের চরিত্রের অভিনেতা। তবে তিনি একা নন, একই সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন সিনেম্যাটোগ্রাফার এবং পরিচালকও।

কিন্তু হঠাৎ করে তাঁরাও লুটিয়ে পড়লেন কেন মাটিতে? এমন কিছু লিখা ছিল না স্ক্রিপ্টেও। তবে? ঘোর কাটতে বেশ খানিক সময় লাগে সেটে উপস্থিত সকলেরই। তারপর মাটিতে প্রবাহমান রক্তধারাই বুঝিয়ে দেয়, বিপত্তি ঘটে গেছে অজান্তেই। হ্যাঁ, প্রপ গানের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আঘাত করেছে সিনেম্যাটোগ্রাফার এবং পরিচালককে। 

সম্প্রতি, এমনই আশ্চর্যকর এবং ট্র্যাজিক দুর্ঘটনা ঘটে গেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস প্রদেশের নিউ মেক্সিকোতে। বাল্ডউইন অভিনীত ১৯ শতকের ওয়েস্টার্ন ঘরানার ছবি ‘রাস্ট’-এর (Rust) সেটে। নায়ক তো বটেই, চলচ্চিত্রটির প্রযোজকও স্বয়ং অ্যালেক বাল্ডউইন (Baldwin)। আর তাঁর ছোঁড়া গুলিতেই নিহত হলেন ৪২ বছর বয়সী সিনেম্যাটোগ্রাফার হ্যালিনা হ্যাচিনস। গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে এয়ারলিফটের মাধ্যমে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু লাভ হয়নি কোনো। ব্যর্থ হয় সব প্রচেষ্টা। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে দেন চিকিৎসকরা। তবে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয় পরিচালক জোয়েল সুজার। বর্তমানে সংকটজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি।

কিন্তু কীভাবে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল হলিউডের সেটে? এই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে বারবার। চলছে তদন্তও। তদন্তে মার্কিন পুলিশকে যথাযথ সাহায্যও করছেন অভিনেতা তথা প্রযোজক বাল্ডউইন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কারোর নামেই দায়ের করা হয়নি অভিযোগ। বিষয়টা অবাক লাগাই স্বাভাবিক। তবে এই ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে ধরে নেওয়া যায় না কখনোই। কারণ, দীর্ঘ বিধিনিষেধ, কঠোর আইন এবং পরীক্ষার পরেই সিনেমার সেটে প্রপ-গান ব্যবহারের অনুমতি দেয় সরকার। এক্ষেত্রেও অন্যথা হয়নি তার। 

আরও পড়ুন
অবসাদ, মদ্যপান কিংবা দুর্ঘটনা – অকালে চলে গেছেন যেসব বলিউড তারকা

সিনেমার পটভূমিকে জীবন্ত করে তুলতে বর্তমানে মূলত আসল বন্দুকই ব্যবহৃত হয় হলিউডের সেটে। তবে তার গুলি হয় পৃথক। বুলেটের পরিবর্তে সেখানে ব্যবহৃত হয় ফাঁকা কার্তুজ। তাতে ফায়ারিং-এর শব্দ এবং ফ্ল্যাশ তৈরি হলেও, গুলি ছুটে যায় না লক্ষ্যের দিকে। পরীক্ষার পরেও সেই জায়গাটিতে গাফিলতি রয়ে গিয়েছিল বলেই প্রাথমিক অনুমান তদন্তকারীদের। 

আরও পড়ুন
দুটি পা-ই হারিয়েছেন দুর্ঘটনায়, যোগ-প্রশিক্ষক হয়ে নজির ব্যারাকপুরের অর্পিতার

তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও ঘটেছে এমন ঘটনা। ১৯৯৩ সালে সিনেমার সেটেই নিহত হয়েছিলেন ব্রুস লি’র ২৮ বছর বয়সী পুত্র ব্র্যান্ডন। সেবারেও দুর্ঘটনা ঘটেছিল প্রপ-বন্দুক থেকেই। কিন্তু একের পর এক বিপত্তির পরেও কেন সতর্ক হচ্ছে না প্রশাসন, সেই জায়গাতেই থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন। তবে সেই চর্চার সময় হয়তো এটা নয়। বরং, এটা পাশে দাঁড়ানোর সময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিল্পীদের, যাঁরা আহত কিংবা নিহত হয়েছেন, সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। হলিউড তো বটেই, ট্র্যাজিক এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা বিশ্বের চলচ্চিত্রজগৎ…

আরও পড়ুন
বন্ধ পেনশন, সংকটে ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনার ৫ হাজার বিধবা

Powered by Froala Editor