২৫শে ডিসেম্বর, বড়দিনের উদযাপন, সারাদিনের যাবতীয় কাজের ফাঁকে কলকাতাবাসী নিশ্চই একবার ঘুরে আসবে পার্ক স্ট্রিট চত্বর। রাস্তার দুপাশে কেকের স্টল থেকে চেখে দেখবে একটা দুটো। ম্যাসাচুসেট থেকে কলকাতা, কলকাতা ছাড়িয়ে গ্রাম-মফঃস্বল জুড়ে বড়দিনের সন্ধ্যা মানে সাজো সাজো পরিবেশ। আর ঠিক এই সময় যদি রাস্তার মাঝে সশস্ত্র মানুষের মিছিল দেখা যায়, যাদের মুখে স্লোগান ‘নো ক্রিসমাস’! না, এই মিছিল কোনো জাতীয়তাবাদী হিন্দু সংগঠনের মিছিল নয়। এই মিছিল কোনো ইসলামিক দেশের মিছিল নয়। খোদ বোস্টন শহরে এই স্লোগান নিয়ে ক্রিসমাসের সন্ধ্যা কাঁপিয়েছে একদল নীতিবাগিশ খ্রিস্টান। আজ নয়, আজ থেকে চারশো বছর আগে।
১৬৫৯ থেকে ১৬৮১, বাইশ বছর ধরে বোস্টন শহরে ক্রিসমাসের উদযাপন ছিল বেআইনি। ইংল্যান্ডেও ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান পরিচালনার অপরাধে শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু কেন? খ্রিস্টান ধর্মের প্রবাদপুরুষ যীশুখ্রিস্টের জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠান নিয়ে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের আপত্তির কারণ কী?
২৫শে ডিসেম্বর, এই দিনটাকে যীশুর জন্মদিন হিসাব মেনে নিতে রাজি ছিলেন না অনেকেই। বাইবেলে যীশুর জন্মদিনের কোনো উল্লেখ নেই। লুক ও ম্যাথিউর গসপেল অনুযায়ী বেথেলহেম শহরের যে বর্ণনা পাওয়া যায়, সেই বর্ণনার অনুসারে অধিকাংশ থিওজফিস্টের অনুমান বসন্তের মাঝামাঝি জন্মেছিলেন তিনি। কিন্তু পশ্চিম রোমের তথাকথিত ম্লেচ্ছ খ্রিস্টানদের মধ্যে বড়দিনের সন্ধ্যা উদযাপনের তাগিদের পিছনে অন্য এক কারণ দেখতে পেয়েছিলেন নীতিবাগীশ খ্রিস্টানরা। রোমের প্রাচীন পেগান ধর্মের প্রভাব ছিল এই অনুষ্ঠানের মধ্যে। 'স্যাটার্নেলিয়া' উৎসবের যাবতীয় আচার-অনুষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায় বড়দিনের কেক বিতরণ থেকে চিরহরিৎ বৃক্ষের সমারোহের মধ্যে।
ক্রিসমাসকে কেন্দ্র করে এই পারস্পরিক চাপানউতোর চলেছিল প্রায় তিনশো বছর ধরে। চতুর্দশ শতক থেকে উদযাপিত এই উৎসবের উপর একাধিকবার একাধিক জায়গায় আইনি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। রোমান বংশোদ্ভুত দ্বিতীয় চার্লস ইংল্যান্ডের রাজসিংহাসন দখল করলে আইনি নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। কিন্তু ছুটির দিন হিসাবে মঞ্জুর করা হয় না। এমনকি ১৮৫৬ সালে ইংল্যান্ডের সরকারি ছুটির দিন হিসাবে উল্লেখ করার পরেও, প্রায় পনেরো বছর ধরে বেশিরভাগ স্কুল-কলেজেই এই ছুটি মঞ্জুর করা হত না। অবশ্য তারপর উনিশ ও বিশ শতক জুড়ে বড়দিন ক্রমশ খ্রিস্টধর্মের সীমানা অতিক্রম করে সারা পৃথিবীজুড়ে উৎসবে পরিণত হয়েছে। বড়দিন মানে লাল পোশাকের সান্টা ক্লজ আর ক্রিসমাস ট্রি। আর অবশ্যই নানাধরনের কেকের সম্ভার...