ক্যাম্ব্রিয়ার অ্যাসপার্সিয়া শহর থেকে সুদূর ইংল্যান্ডে এসেছেন এক তরুণী। উদ্দেশ্য, চিত্রশিল্প শিক্ষা। ইতিমধ্যে নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়ে লন্ডনের সেন্ট মার্টিন স্কুলে জায়গা পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সেই শিক্ষা কিছুদূর এগোতে না এগোতেই শুরু হল জটিলতা। নিজেকে শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা তো নেহাৎ সহজ নয়। তার মধ্যে নানা ঘাত-প্রতিঘাত আসবে, সেটাই স্বাভাবিক। স্কুলের তরফ থেকে তরুণীকে প্রস্তাব দেওয়া হল একটি ফ্যাব্রিক ডিজাইনিং কোম্পানিতে কাজ করার জন্য। এক ধাক্কায় যেন তাঁর স্বপ্ন ভেঙে গেল। ক্ষোভে স্কুল ছাড়লেন সেই তরুণী। আর তারপর কোনোক্রমে অর্থ জোগাড় করে নিজের একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করলেন বিউয়্যাক্স আর্ট গ্যালারিতে।
সেদিন বিউয়্যাক্সের প্রদর্শনী থেকে দুটি তৈলচিত্র এবং একটি স্কেচ কিনেছিলেন ইংল্যান্ডের অন্যতম বিখ্যাত চিত্রশিল্পী এল এস লাওরি। শুধু তাই নয়, দেখা করতে চাইলেন শিল্পীর সঙ্গেও। ১৯৫৫ সালে একটি টিউব স্টেশনের সামনে দেখা হল লাওরি এবং সিলা ফেলের। শুরু হল এক অসম বন্ধুত্বের সম্পর্ক। একজন তখন জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে গিয়েছেন। অন্যজন সদ্য জীবন শুরু করছেন। একজনের ছবি জুড়ে শুধুই নাগরিক জীবনের হতাশা, আর অন্যজনের ছবিতে প্রকৃতির নির্মল আনন্দ। দুজন দুজনের শিল্পের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও কেউ কারোর পথে হাঁটেননি। ধীরে ধীরে লাওরির সহযোগিতা পেয়েই শিল্প জগতে স্থায়ী জায়গা করে নেন ফেল।
এই অসম বন্ধুত্বের সাক্ষী হয়েই থেকেছে মেরিপোর্টের ক্রাইস্ট চার্চ। সময় পেলে প্রায়ই এখানে চলে আসতেন দুজনে। পরিত্যক্ত কয়লাখনি শহরে যেমন লাওরি নাগরিক জীবনের হতাশাকে খুঁজে পেতেন, তেমনই প্রকৃতির নির্মল শোভা খুঁজে পেতেন ফেল। দুজনের ক্যানভাসে একই জায়গা ধরা দিত পৃথক পৃথক চেহারায়। আজও সেই বন্ধুত্বের কাহিনি বুকে নিয়েই দাঁড়িয়ে রয়েছে ক্রাইস্ট চার্চ। ২০১৩ সাল থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে সমস্ত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। তবে এর মধ্যেই নতুন করে গির্জাটিকে ব্যবহারযোগ্য করে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। মেরিপোর্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ব্যাপারে ইংল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকেও আর্থিক সাহায্যের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সম্প্রতি গ্রেড-২ ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ক্রাইস্ট চার্চ। আর সেখানেই একটি সংগ্রহশালা গড়ে তোলার কথাও জানানো হয়েছে।
একসময় এই মেরিপোর্টে বসেই ‘অন দি কিউয়ে’ বা ‘ওল্ড কিউয়ে’-এর মতো ছবি এঁকেছেন এল এস লাওরি। আর সেইসব ছবির সঙ্গে জড়িয়ে থেকেছে লাওরি-ফেলের অসম বন্ধুত্ব। এবার সেইসব ছবিকেই স্থায়ী প্রদর্শনীর জন্য নিয়ে আসা হবে ক্রাইস্ট চার্চে। এই পরিত্যক্ত গির্জার বুকেই অক্ষয় হয়ে থাকবে দুই শিল্পীর জীবনকাহিনি।
আরও পড়ুন
সারা পৃথিবী ঘুরে, ৩ হাজার ক্যামেরা সংগ্রহ করেছিলেন স্কটল্যান্ডের এই ব্যক্তি
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
জন্মস্থান থেকে সরে যাচ্ছে নজরুল সংগ্রহশালা, এমনটাই কি কাম্য ছিল?