এবারের মতো বাক্স প্যাঁটরা গোছাল কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। রাত ন’টার বিদায় ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে চেপে বসল একরাশ মনখারাপ। বইমেলার শেষ দুপুরেই সুভাষ মুখোপাধ্যায় মঞ্চে উপস্থিত টিম প্রহর। অনুষ্ঠিত হল ‘ছোটো’ পত্রিকার ‘ছোটো’ পুরস্কার। শুধু প্রহর নয়, উপস্থিত ছিলেন লিটল ম্যাগাজিন পরিবারের অনেক সদস্যই। এককথায়, ছোটোখাটো একটা মেলাই যেন জমে উঠল এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান ঘিরে। যেখানে প্রাপকদের পাশাপাশি, প্রহর স্যালুট জানাল সকল লিটল ম্যাগাজিন কর্মীদেরই। হয়তো নিজেদের শিকড়কেও।
নামে ‘ছোটো’ হলেও লিটল ম্যাগাজিন সাহিত্যের এক বিশাল দিগন্ত। তরুণ কবির জন্য উন্মুক্ত মাঠ এই লিটল ম্যাগাজিন। বিগত বছরগুলির মতো এবারেও তাঁরা নিজেদের সম্ভার নিয়ে হাজির ছিলেন বইমেলায়। বৈচিত্র্যময় সেই সম্ভার। কারুর কাছে অদ্ভুত সব বিশেষ সংখ্যা আবার কারুর সাধারণ সংখ্যায় চোখে ধাঁধিয়ে দেয়। এসবের পিছনে আসলে রয়েছে এক অবিরাম সাধনা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রম। তাকে সম্মান জানাতেই প্রহরের এই আয়োজন। ‘ছোটো’ পত্রিকার ‘ছোটো’ পুরস্কার’। এখানে জমা পড়েছিল প্রায় শ’খানেক লিটল ম্যাগাজিন। সেখান থেকে বাছাই করে নেওয়া হয় দুটো বিভাগের দুটি পত্রিকাকে।
বিচারক ও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কবি গৌতম বসু এবং কবি একরাম আলি। পত্রিকাগুলি নির্বাচনের কারণ জানাতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন দুজনেই। তাঁদের হাত দিয়েই সেরা সাধারণ সংখ্যার পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় 'রাবণ' পত্রিকাকে এবং বিশেষ সংখ্যার পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় ‘বোধশব্দ’-এর এবার গল্প সংখ্যাকে। উপস্থিত ছিলেন এই দুই পত্রিকার সম্পাদক সোমাইয়া আখতার এবং সুস্নাত চৌধুরী। তবে শেষ মুহূর্তে প্রহরের পক্ষ থেকে বাকি ছিল একটি চমক। বিশেষ নির্বাচন হিসেবে আরও একটি পত্রিকাকে পুরস্কৃত করল প্রহর। যাঁদের এই কাজ পুরস্কার পাওয়ার মতোই। সেটি, ‘আচমন’ পত্রিকার আচার্য ললিতমোহন সেন-কে নিয়ে বিশেষ সংখ্যা। এবং এই পুরস্কারটি প্রদানে মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয় উপস্থিত সকল সম্পাদক ও লিটল ম্যাগাজিন কর্মীদের। তাঁদের হাতেই সম্মানিত হয় আচমন পত্রিকা।
পুরস্কার আসলে খানিক অছিলা মাত্র। মুহূর্তটি ছিল গোটা লিটল ম্যাগাজিন পরিবারের এক হওয়ার। একটি পত্রিকার পেছনে যে নিরলস পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং খোঁজের চেষ্টা থাকে, তাকেই সম্মানিত করলাম আমরা। প্রহর এই অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ প্রসূন ভৌমিক, শান্তনু মুখার্জি ও বাবলা বালা-র কাছে। আয়োজন হয়তো সামান্য, কিন্তু আন্তরিক চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখা হয়নি। অনুষ্ঠানের শেষে, পুরো লিটল ম্যাগাজিন পরিবারের এক মঞ্চে জড়ো হওয়া আসলে এক বৃহত্তর পরিবারেরই কাহিনি। এই পত্রিকাদের সম্মানিত করতে পেরে, এবং চলার পথে অন্যান্য সমস্ত পত্রিকাকে পাশে পেয়ে, আমরা আপ্লুত।