দিনটা ছিল গুড ফ্রাইডে। পবিত্র ছুটির দিন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে তাই সন্ধ্যায় ক্লাবে না গিয়ে বাড়িতেই ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ. আর. উইলকিনসন। রাতের খাওয়া সেরে তাড়াতাড়িই ঘুমোতে চলে যান তিনি। অনুচ্চ পাহাড়ের ওপর নির্মিত সাজানো বাংলোয় তখন নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাচ্ছেন জেলার সর্বময় কর্তা, তাঁর দূরতম কল্পনাতেও আসেনি, ক্লাবে না যাওয়ার সিদ্ধান্তটি কতখানি অব্যর্থ ছিল। সেকথা অবশ্য উইলকিনসন টের পাবেন রাত দশটার কিছু পরেই। সাড়ে দশটা নাগাদ বাংলোর বাইরে কিছু মানুষের হট্টগোল শুনে ঘুম ভেঙে গেল তাঁর। এত রাতে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেটের বাংলোয় এসে তাঁর ঘুম ভাঙানোর দুঃসাহস হল কার? খানিক বিরক্তি ও খানিক কৌতূহল নিয়েই বেরিয়ে আসেন উইলকিনসন।
বেরিয়ে এসে দুজন মানুষকে দেখতে পান তিনি। একজন পুলিশ কনস্টেবল জরাসিন্ধু বড়ুয়া, যাঁকে পাঠিয়েছেন সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ জে. আর. জনসন, আর অন্যজন টেলিগ্রাফ অফিসের পিওন মহেন্দ্র দে, যাঁকে পাঠিয়েছেন ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ টেলিগ্রাফস স্কট। বড়ুয়ার বয়ান শুনে ঘুম উড়ে গেল দীর্ঘকায় ব্রিটিশ কর্তার। পুলিশ লাইন আর্মারি আর গলফ কোর্সে নাকি সশস্ত্র বিপ্লবীরা হামলা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে জনসনকে টেলিফোন করবেন বলে বাড়ির মধ্যে ঢুকতে যাবেন, এমন সময় আরও একটি খারাপ খবর দিলেন উপস্থিত দ্বিতীয় ব্যক্তিটি। টেলিফোন অফিসে ঢুকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে চারজনের একটি দল। উইলকিনসন প্রমাদ গুনলেন। পাহাড়-সমুদ্রের মেলবন্ধনের শান্ত চট্টগ্রামে এই ইস্টার সপ্তাহান্তটি যে একেবারেই শান্ত যাবে না, ততক্ষণে বুঝে গিয়েছেন ধুরন্ধর ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট। তড়িঘড়ি ড্রাইভার বিরমান থাপাকে জাগালেন তিনি। গাড়িতে তুলে নিলেন কনস্টেবল বড়ুয়াকেও। গন্তব্য পাহাড়তলির অক্সিলিয়ারি ফোর্সেস অফ ইন্ডিয়া (এএফআই) আর্মারি। যে করেই হোক, জনসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা দরকার। পুলিশ লাইন আর্মারির চেয়েও এএফআই আর্মারির গুরুত্ব যে আরও বেশি, একথা চট্টগ্রামের সাধারণ হাবিলদারও জানেন।
জনসন এ খবর পেয়েছিলেন বাঙালি রিজার্ভ সাব-ইনস্পেক্টর সঞ্জীবচন্দ্র নাগের কাছ থেকে। সঞ্জীবের চোখের সামনেই খাকি পোশাক-পরিহিত সশস্ত্র বাহিনী প্রায় বিনা-বাধায় দখল করে নেয় পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগারটিকে। ভীত, সন্ত্রস্ত সঞ্জীব কনস্টেবল কোয়ার্টারে সাহায্যের জন্য ডাকাডাকি করেও কাউকে পাননি। অবশেষে তিনিই জরাসিন্ধু বড়ুয়াকে নিয়ে জনসনের বাংলোয় ছুটে যান। সেসময় জনসনের বাড়িতে ডেপুটি ইনস্পেক্টর-জেনারেল (ডিআইজি) চার্লস ফার্মার উপস্থিত ছিলেন। সঞ্জীব নাগের কাছ থেকে একথা শুনে তাঁরা প্রথমে তাঁকে কোতোয়ালি থানায় জানাতে বলে, কিন্তু টেলিফোনের লাইন না পাওয়ায় পায়ে হেঁটেই কোতোয়ালি পৌঁছন সঞ্জীব। জরাসিন্ধু বড়ুয়াকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে জনসন ও ফার্মার রওনা হন এএফআই হেডকোয়ার্টারের দিকে। গন্তব্যে পৌঁছে যে দৃশ্য তাঁরা দেখেন, তাতে তাঁদের সভ্যতা-গর্বী ব্রিটিশ দম্ভ যে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল, সেকথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এএফআই আর্মারিও যে ‘স্বদেশী লোগ’দের হাতে গিয়ে পড়বে, এমন ভাবনা চরম দুঃস্বপ্নেও আসেনি তাঁদের। নিজেদের সঙ্গে থাকা দুটো রিভলভারের উপর ভরসা করে তাই আর বেশি এগনোর সাহস করেননি ব্রিটিশ পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদ্বয়। জনসন পরে নিজস্ব বয়ানে লিখেছিলেন, সেদিন তাঁরা যথেষ্ট ভাগ্যবান ছিলেন যে, এএফআই বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে অক্ষত দেহে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন।
জনসনদের কিছু পরেই সেখানে এসে পৌঁছন উইলকিনসন ও এএফআইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠন অসম-বেঙ্গল রেলওয়ে ব্যাটেলিয়নের সহকারী সেনাপতি ক্যাপ্টেন টেইট। বিপ্লবীদের চোখে পড়ে যান তাঁরা। একজন চেঁচিয়ে ওঠেন – ‘কে ওখানে?’ উইলকিনসন বলে ওঠেন – ‘বন্ধু’। উইলকিনসন অবশ্য তখনও জানতেন না, একটু আগেই অতিরিক্ত কৌতূহলের খেসারত দিতে হয়েছে সার্জেন্ট-মেজর ডব্লিউ. ফেরেলকে। উইলকিনসনের সাহেবি উচ্চারণ বুঝতে অসুবিধা হয়নি বিপ্লবীদের। গুলি চালিয়ে দেন গাড়ির দিকে। মারাত্মক জখম হন বিরমান থাপা।
আশ্চর্যজনকভাবে গুলির আঘাত থেকে বেঁচে যান দুই ব্রিটিশ। জখম মানুষটিকে গাড়ি-সহ ফেলে রেখে পায়ে হেঁটেই চলে যান চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে একটি ইঞ্জিন তাঁদের পৌঁছে দেয় জাহাজ-বন্দরে। আধুনিক পরিষেবা-যুক্ত ভারতীয় বন্দরগুলির মধ্যে অন্যতম এই চট্টগ্রাম নৌবন্দর। ‘হ্যালিজোন্স’ জাহাজ থেকে অবশেষে কলকাতায় তার পাঠাতে পারলেন উইলকিনসন – ‘SERIOUS ARMED RISING AT CHITTAGONG STOP ARMOURIES HAVE BEEN RAIDED AND TELEGRAPH CUT STOP SEND AT LEAST TWO COMPANIES TROOPS AND MACHINE GUNS STOP POSITION CRITICAL STOP DISTRATE CHITTAGONG ANCHORAGE CHITTAGONG STOP ENDS.’
যে সাহায্যের কথা লিখে টেলিগ্রাফে বার্তা পাঠালেন উইলকিনসন, সেই সাহায্য আসতে লেগে যাবে আরও দিন চারেক। কারণ, ওদিকে নিখুঁত পরিকল্পনার আরও একটি প্রদর্শন হিসেবে চট্টগ্রামের ৩০ থেকে ৪০ মাইল উত্তরে উপড়ে ফেলা হয়েছে রেলপথ। কিন্তু জাহাজের দিকটা দেখা হয়নি, বড় ভুল থেকে গেল একটা। আরও কয়েকটা ছোট অস্ত্রাগারের সন্ধান ছিল না বিপ্লবীদের কাছে। জাহাজঘাটার অস্ত্রাগারে ক্যাপ্টেন টেইটের নিজস্ব কিছু বন্দুক নিরাপদেই ছিল। পাহাড়তলির আরেকটি ছোট অস্ত্রাগারে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র মজুত করা ছিল। যদিও রাতভর বিপ্লবীদের আঘাতের চেষ্টা করেও সামান্যতমও রক্ত ঝরাতে পারেনি তাবড় ব্রিটিশ অফিসাররা। ভোররাতে বিশাল বাহিনী নিয়ে যখন ফেরত আসেন জনসনরা, তখন আর কেউই সেখানে নেই। কিন্তু এই অ-কালবৈশাখীর অবশিষ্ট হিসেবে যা পড়ে ছিল, শাসকতন্ত্রকে স্তম্ভিত করে দেওয়ার পক্ষে তাই ছিল যথেষ্ট। ব্রিটিশদের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিপ্লবীদের নিজস্ব গাড়ি, কয়েকটা বন্দুক ছাড়া পড়ে ছিল কেবল লিফলেট, সেখানে কোন এক ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করছে। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে রিপোর্টে অবশ্য তারা এই খবর বেমালুম চেপে যায়, যে, আর্মারি চত্বরে উড়তে থাকা জাতীয় কংগ্রেসের তেরঙ্গা পতাকার নিচে পড়ে ছিল ইউনিয়ন জ্যাকের দগ্ধাবশেষ। স্বাধীনতা ঘোষণার এমন স্পর্ধা দেখে স্পষ্টতই দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশ আমলাবাহিনী। কারা এই ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি? কে-ই বা তাদের নেতা? এতখানি সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে আক্ষরিক অর্থে বুদ্ধিশ্রেষ্ঠ ব্রিটিশের রাতের ঘুম উড়িয়ে দেওয়ার দুঃসাহস কে রাখে বাংলার এই কোণটিতে?
ধীরে ধীরে সবই জানা যাবে। চারদিন স্বাধীন হয়ে থাকার আনন্দ অচিরেই বদলে যাবে রক্তক্ষয় আর নির্মমতার আখ্যানে। ২২ এপ্রিল, ১৯৩০, জালালাবাদ পাহাড়ের গায়ে ব্রিটিশ বাহিনীকে পশ্চাদপসারণে বাধ্য করার গৌরবময় অধ্যায় ভারত ইতিহাসকে তাঁরা উপহার হিসেবে দিলেও এই জয় খুব বেশি আনন্দ দেয়নি মাস্টারদাকে। টেগরা বল, প্রভাস বল, মতি কানুনগো, বিধূ ভট্টাচার্য, ত্রিপুরা সেন, জিতেন দাশগুপ্তদের রক্তে ভিজে যাওয়া জালালাবাদের পাথর-ঘাসে সেদিন হয়ত তাদের অতি প্রিয় শিক্ষকের চোখের জলও পড়েছিল দু-এক ফোঁটা। এগারো জনের দেহ পরে ব্রিটিশরা এসে পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। কালারপোলের গুলি-বিনিময়ে শহিদ হওয়া স্বদেশ রায়, মনোরঞ্জন সেন, দেবপ্রসাদ গুপ্ত, রজত সেন, চন্দননগরে টেগার্টের বাহিনীর মুখে বীরের মতো লড়ে প্রাণ দেওয়া জীবন ঘোষাল, ধলঘাটে একা লড়ার পর কাঠের সিঁড়িতে পড়ে থাকা নির্মল সেন কিংবা বুকে গুলি নিয়েও হাসিমুখের অপূর্ব সেন, পাহাড়তলিতে নির্দ্বিধায় পটাশিয়াম সায়ানাইড গলায় নেওয়া তাঁর অতিপ্রিয় ‘বিজয়া’ প্রীতি, ১৯৩৩-এর ১৭ ফেব্রুয়ারির রাতে গৈরালায় নেত্র সেনের বিশ্বাসহন্তায় গোর্খা সৈন্যের হাতে আশ্রয়দাতা ব্রজেনের সঙ্গে ধরা পড়ে যাওয়া, এবং সর্বোপরি গহিরায় ধরা পড়া কল্পনা আর তারকেশ্বর, যাঁকে ভেবেছিলেন দলের পরবর্তী দায়িত্ব দিয়ে যাবেন – প্রায় তিন বছরের এই শিকার-শিকারী-সম অগ্নিক্রীড়ায় শেষ পর্যন্ত হয়ত ব্রিটিশেরই জয় হয়েছিল। কিন্তু পরাধীন ভারতে এত সুষ্ঠু পরিকল্পনা-মাফিক একটি সুগঠিত সরকার তৈরি করে যে ভয়ানক ধাক্কাটা দিয়েছিলেন নিতান্ত শীর্ণকায় এক বাঙালি শিক্ষক এবং তাঁর অজস্র ছাত্র-যুবরা, তা যে ব্রিটিশকে কতখানি বিব্রত করেছিল, তা তাঁর অচৈতন্য দেহকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়ে মৃতদেহকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করার মধ্যেই পরিষ্কার।
তবে, এমন টানটান থ্রিলারের বাস্তব চিত্রায়ণ সত্ত্বেও ১৯৩০-এর ১৮ এপ্রিল, এই বিশেষ দিনটির আরও একটি তাৎপর্য এখানে অবশ্য আলোচনা-যোগ্য, যেখানে স্বাধীনতা সংগ্রামের তৎকালীন দুটি সম্পূর্ণ পৃথক পন্থার পরস্পর-সম্পৃক্ততা স্বচ্ছভাবে ফুটে ওঠে। পুলিশ লাইন আর্মারির দরজা ভেঙে ফেলার পর সকলে স্লোগান দিয়ে উঠেছিলেন – ‘মহাত্মা গান্ধী কি জয়’। রাতপাহারায় থাকা সান্ত্রী রমণীমোহন চক্রবর্তী এগিয়ে এলে তাঁকে ঝাঁঝরা করে দেয় অনন্ত সিং আর গনেশ ঘোষের বুলেট। সঙ্গে সঙ্গে ছয় বিপ্লবী চেঁচিয়ে ওঠেন – ‘হটো, ভাগো, জান বাঁচাও, গান্ধীজি কা রাজ হো গ্যায়া’। তাঁদের উপস্থিত নেতা মাস্টারদা নন, যুবকদের মুখে গান্ধীজির নাম। আসলে এর পিছনেও রয়েছে গভীর স্বদেশ-চেতনা।
১৮ এপ্রিলের বারো দিন আগেই ডাণ্ডিতে পৌঁছে সমুদ্রসৈকতের ধার থেকে লবণ সংগ্রহ করে দেশকে প্রবল নাড়িয়ে দিয়েছেন গান্ধীজি। সেই সময়ে গান্ধীর মাপের জননেতা যে আর দ্বিতীয়টি নেই, একথা বিলক্ষণ জানতেন সূর্য সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, অনন্ত সিংরা। দেশব্যাপী এমন উত্তাল অবস্থায় সশস্ত্র বিপ্লবীরা তাই নিজেদের সাফল্যের জয়ধ্বনি দিতে তাঁর নামের ব্যাপকতা স্বীকার করে বুঝিয়ে দিচ্ছে, তারা নিতান্ত অস্ত্র-চুরি করা ডাকাত বা বোমা-বন্দুক ছোঁড়া মস্তান নয়, অহিংসায় বিশ্বাসী না হলেও উদ্দেশ্যগত দিক থেকে অহিংসা-পন্থীদের সঙ্গে তাদের কোনও প্রত্যক্ষ বিরোধ নেই। প্রসঙ্গত, আয়ারল্যান্ডে ঘটে যাওয়া ১৯১৬ সালের ইস্টার অভ্যুত্থান যাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল, সেই মাস্টারদা স্বয়ং কংগ্রেস-কর্মী থাকাকালীন অহিংসায় আস্থা রেখে গান্ধীজির অনুরোধে একবছর সশস্ত্র বিপ্লব মুলতুবি রেখেছিলেন। তারপরে, অসহযোগ আন্দোলন-প্রত্যাহারের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ কীভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনকে আগুন জুগিয়েছিল, সে ইতিহাস কমবেশি সকলেরই জানা।
ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির কিছু আগেই উত্তর ভারতে আরেকটি সুপরিচিত রিপাবলিকান সংগঠনের কার্যকলাপও ব্রিটিশকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল। তবে তাঁদের কাজেও অনেক বেশি জড়িয়ে ছিল বিক্ষিপ্ততা। মাস্টারদা কিছুদিন এঁদের কাজ সামনে থেকে দেখেছিলেন। তাই প্রথম থেকেই তাঁর বক্তব্য ছিল, বিক্ষিপ্ত রাজনৈতিক লুণ্ঠন বা গুপ্তহত্যার দ্বারা প্রবল প্রতাপশালী সাম্রাজ্যকে টলিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। চট্টগ্রামের একটি বড়ো অংশে মুসলিম মানুষদের বাস হওয়ায় অত্যন্ত সচেতনভাবেই তিনি দলের নামের সঙ্গে কোনও ‘হিন্দুস্তান’ শব্দ যুক্ত করেননি। জাহাজবন্দরের দিকে নজর না দেওয়া এবং গুড ফ্রাইডের কথা মাথায় না রেখে ফাঁকা ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করতে যাওয়া ছাড়া সেভাবে তাঁদের পরিকল্পনায় যে ফাঁক ছিল না, তার পিছনে মাস্টারদার এই সুসাংগঠনিক মনোভাবই দায়ী।
সেই মনোভাবই হয়তো তাঁর নখ উপড়ে নেওয়া আঙুল দিয়েও তাঁকে লিখিয়ে নেয় সহযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে রেখে যাওয়া শেষ বাণীটি – ‘কখনও ভুলে যেয়ো না দিনটিকে, ১৮ এপ্রিল, ১৯৩০।’ আর সেখানে ১৮ এপ্রিলের কথা বলতে গেলেই অবধারিত ভাবে বলা হয়ে থাকে ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’। ব্রিটিশের শিখিয়ে যাওয়া ‘লুণ্ঠন’ শব্দটিকে অচেতনভাবেই ব্যবহার করে আমরা হয়ত বারবার ছোট করি ওই শীর্ণকায় অথচ দৃপ্ত চট্টল-সূর্যকে। হে মোর দুর্ভাগা দেশ!
Powered by Froala Editor