নিজের বাড়িতে বসে রেকর্ড করা গান। ক্যাসেট থেকে ডিজিটাইজ করায়, খানিক খসখসে। তবে শুনতে সমস্যা হয় না তাতে। প্রথমে মৃদু হারমোনিয়ামে সুরের জাল বোনা এবং তারপরেই শুরু হয় লাবণ্যমণ্ডিত গভীর রোম্যান্টিক কণ্ঠে গান - ‘চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে’! শুনতে শুনতে মনে হল পড়ন্তবেলার আলোছায়াভরা নিরালা ঘরটা অল্প অল্প করে সুমিষ্ট, গভীর কণ্ঠে গানের শুভ্র, নরম আলোয় ভরিয়ে তুলছেন তিনি।
এ ঘটনা প্রায় বছরখানেক আগের। তবে সে মুগ্ধতার রেশ কাটেনি আজও, এ জীবনে কাটবে বলে মনেও হয় না। সেই শিল্পীর নাম চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় - রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গানের চিরসবুজ যুবরাজ! এইভাবেই বাঙালি এখনও মুগ্ধ হয়ে থাকে তাঁর গাওয়া গানে। আজ তাঁর নব্বইতম জন্মদিন।
সালটা ১৯৩০। ততদিনে মেদিনীপুর থেকে ভবানীপুরের ৫১/বি শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রীটের বাড়িতে উঠে এসেছেন নরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। ইংরেজীর ৭ অক্টোবর অর্থাৎ বাংলার ২০শে আশ্বিন, ১৩৩৭ সন, মঙ্গলবারে কোজাগরী লক্ষ্মীপূর্ণিমার দিন দুপুর ১টা -২০ মিনিটে ধবধবে ফর্সা রং ও একমাথা কোঁকড়া চুল নিয়ে ভূমিষ্ঠ হল তাঁর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। চিন্ময়ের মায়ের নাম নীহারবালা দেবী। চিন্ময়রা হলেন দুই ভাই, দুই বোন। দাদার নাম জ্যোতির্ময় চট্টোপাধ্যায়। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে চিন্ময়ের বাবা নরেন্দ্রনাথ ছিলেন সবচেয়ে বড়। মেজোভাই হলেন জিতেন্দ্রনাথ, যিনি দাদার সঙ্গেই চলে এসেছিলেন, আসেননি শুধু ছোটভাই বিপিনবিহারী। জিতেন্দ্রনাথের পুত্র বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ই হলেন পূর্বোল্লিখিত বীরেন জেঠু, নিজেও কণ্ঠশিল্পী এবং সঙ্গীতশিক্ষক। জেঠু এখন অশীতিপর যুবক।
আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যেও নরেন্দ্রনাথ সপরিবারে উঠে এসেছিলেন টালিগঞ্জের ৮৪ নং রসা রোডের বাড়িতে ১৯৩৮ সাল নাগাদ। এখানেই কেটেছে চিন্ময়ের বাকি জীবন। রসা রোডের বর্তমান নাম চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় সরণী।
এই বাড়িতেই রাস্তার দিকে রয়েছে চিন্ময়বাবুর গানের ঘর। শিল্পীর প্রয়াণের ৩২ বছর পর সেই ঘরে দেখা পেয়েছি একমাত্র বীরেন জেঠুর। চিন্ময়বাবু তাঁর ‘ছোড়দা’। এঁদের টানেই বারবার ছুটে গেছি ঐ বাড়িতে। শুনেছি আশ মিটিয়ে স্বর্ণযুগের সোনায় মোড়া দিনগুলির কথা। জেঠুর কাছে শোনা কিছু ঘটনার কথা শিল্পীর জন্মবার্ষিকীতে ভাগ করে নেওয়া যাক আজ।
আরও পড়ুন
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথকে নিজের চোখে দেখেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়!
বালিগঞ্জের ডোবার লেন মিউজিক কনফারেন্সে একদিন রবীন্দ্রসঙ্গীত ও আধুনিক গানের অনুষ্ঠান হচ্ছে। রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রথমে এবং পরে আধুনিক। রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করতে শুরু করলেন চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। অনেকগুলি গানের পর শেষ গানটি গাইলেন - ‘আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছ দান’। প্রধানত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শ্রোতারাই উপস্থিত ছিলেন সেখানে, তারাও সবাই মুগ্ধ রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে! গান গেয়ে মঞ্চ থেকে নেমে আসতেই চিন্ময়কে জড়িয়ে ধরলেন প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য! একজন গুণী আরেকজন গুণীর কদর করতে একটুখানিও কার্পণ্য করেননি।
ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের ভাই কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী পান্নালাল ভট্টাচার্য আবার একদিন স্বয়ং উপস্থিত হলেন চিন্ময়বাবুর বাড়িতে। বললেন, আমি একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইব, আপনি তুলে দিন। খুব সম্ভবত কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে গাইবার জন্যে তুলতে চাইছিলেন একটি রবীন্দ্রগান। চিন্ময় সব শুনে বললেন, আপনার গলায় ঐ গানটা খুব ভালো মানাবে – ‘ভালো যদি বাস, সখী, কি দিব গো আর’। কথামতন গানটি পান্নালালকে তুলিয়ে দেন চিন্ময়।
এরকমই আবদার করেছিলেন একবার চিন্ময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং বাংলা গানের একজন উজ্জ্বলতম নক্ষত্র শ্যামল মিত্র। তখনও ওঁর রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড বেরোয়নি। রেডিও বা অন্য কোথাও গাইবার জন্য একটি গান তুলতে চলে এলেন বন্ধুর কাছে। বললেন, চিন্ময়, আমায় একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত তুলিয়ে দে যেটা আমার গলায় ভালো লাগবে। চিন্ময় শোনালেন ‘ধরা দিয়েছি গো আমি আকাশের পাখি’। কয়েক মিনিটের মধ্যে বারদু’য়েক শুনে শ্যামলবাবু হারমোনিয়ামটা টেনে নিয়ে বললেন, আমি একটু গাই, তুই শোন। শুরু করলেন গান এবং একেবারে পারফেক্ট গেয়ে দিলেন! ঈশ্বরদত্ত প্রতিভা!
শ্যামল মিত্র সম্পর্কিত একটা ঘটনা উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি না।
একদিন সন্ধ্যাবেলায় মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় (উনিও চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু) ,শ্যামল মিত্র-র বাড়ি হাজির আড্ডা দিতে। সঙ্গে তার নতুন গাড়ি 'ইংল্যান্ড অস্টিন'। গাড়িটির আসল নাম কিন্তু ছিল 'অস্টিন অফ ইংল্যান্ড'। কিন্তু কিভাবে যে গাড়িটা 'ইংল্যান্ড অস্টিন' নামে পরিচিতি পেল তা ঈশ্বরই জানেন। যাই হোক, সেই গাড়ি দেখেই শ্যামলবাবু বললেন, এই, এটা কবে নিলি? আমাকে একটা জোগাড় করে দে না। মানববাবু খুব উচ্ছ্বসিত। সঙ্গে সঙ্গে বললেন, তোর চাই? দে তোর টেলিফোনটা এগিয়ে দে তো। ফোনে তিনি মিত্রবর যোগেশবাবু কে বললেন গাড়ির কথা। উনি থাকতেন ঢাকুরিয়ায়। গাড়ি কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। ওনাকে বলার তিনদিনের মধ্যে শ্যামলবাবু পেয়ে গেলেন একটা নতুন গাড়ি। এইভাবেই শ্যামলবাবু মারফত আরো দুটো গাড়ি জোগাড় হল তাঁর আরো দু’জন বন্ধুর জন্য। একটা পেলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায় আর আরেকটা পেলেন নির্মলেন্দু চৌধুরী।
আরও পড়ুন
‘তোমার স্টাইলে গানটা রেকর্ড করলাম’ – চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়কে লিখে দিয়েছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস
গাড়ির গল্প এখানেই শেষ নয়। সবার গাড়ি দেখে একদিন শ্যামল মিত্র-র বাড়ি এলেন চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। সময়টা বোধয় ১৯৫৮ কিংবা ১৯৫৯। তাঁরও একটা 'ইংল্যান্ড অস্টিন' চাই। একই মডেলের গাড়ি আর কত পাওয়া যায়। যোগেশবাবুর সঙ্গে কথা বলে শ্যামলবাবু জানলেন ওই একই গাড়ি আর পাওয়া যাবে না। তাই চিন্ময়কে রাগানোর জন্য শ্যামলবাবু বললেন, আমরা সবাই আধুনিক গান, লোক-সঙ্গীতের শিল্পী, তাই আমাদের এই রকম গাড়ি। তুই হলি গিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী, তোর জন্য অন্য ভালো গাড়ি জোগাড় করে দিচ্ছি। চিন্ময়বাবু যা বোঝার বুঝলেন। কয়েকদিন পর শ্যামলবাবু তাঁকে একটা মরিস মাইনর জোগাড় করে দিয়েছিলেন যোগেশবাবু মারফত। চিন্ময়ের সেই গাড়ির নম্বর ছিল ৫২২২।
আরেকদিনের মজার ঘটনা। ভি. বালসারা এসেছেন চিন্ময়ের বাড়িতে তাঁকে নিজের সুরে একটি রম্যগীতি তোলাবেন বলে। তখন আকাশবাণীতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে নিয়মিত রম্যগীতিও গাইতেন চিন্ময়। ছবির মত সাজানো-গোছানো চিন্ময়ের গানের ঘরেই চলছে গান তোলানো, বালসারাজি হারমোনিয়াম বাজচ্ছেন। এই দৃশ্য দেখে চিন্ময়ের ভৃত্য অরুণ সোজা চলে যান বীরেন জেঠুর ঘরে, বলেন – বীরুদা, শিগগির চলুন। জেঠু বললেন, কি হয়েছে রে? অরুণ বলেন, ছোড়দা সবাইকে গান শেখায়, আজকে একজন ছোড়দাকে গান শেখাচ্ছেন! ব্যাপার শুনে জেঠু নীচে এসে দেখেন ঘরে বসে আছেন ভি. বালসারা ও চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়!
খুনসুটিও চলত ভায়েদের মধ্যে। ‘ছেলেটা’ নামের একটি ছায়াছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন চিন্ময়। একদিন খুড়তুতো ভাই বীরু সকালে বাইরের দিকে এসেছেন সবে। স্বাভাবিকভাবেই তার পরনে বাড়ির সাদামাটা পোশাক। দেখলেন ছোড়দা আসছেন গাড়ি করে। বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে চিন্ময় বললেন, ‘ছেলেটা’ ছবির শো আছে, দেখতে যাবে? বীরু বললেন, নিশ্চয়ই। জামাটা পাল্টে আসি। চিন্ময় বললেন, চল না, ওতে কিছু হবে না। বীরু বললেন, এভাবে যাওয়া যায় নাকি? এখুনি আসছি ভালো কিছু পরে। চিন্ময় বললেন, আচ্ছা, তার আগে চল মোড়ের দোকান থেকে পান খেয়ে আসি। বীরু খুশি মনে উঠলেন গাড়িতে। এদিকে গাড়ি কিন্তু অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও থামল না, একেবারে পৌঁছল সিনেমা হলের সামনে। বাড়ির কাপড় পরে গাড়িতে বসে রয়েছেন ভাই, এদিকে দাদা বাইরে গিয়ে বলছেন, আমার ভাইও এসেছে। সবাই ডাকাডাকি করতে লাগলেন, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের ভাই এসেছেন! বীরু গাড়ি থেকে নামলেন না। চুপ করে বসে রইলেন। শো চালু হবার পর হল অন্ধকার হতে চুপিচুপি গিয়ে বসলেন সিটে, শেষ হবার কিছুক্ষণ আগে আবার এসে বসলেন গাড়িতে, যেন ফিল্মটা দেখেনইনি। শো শেষ হতে ফিরে এসে মুচকি হেসে চিন্ময় জিজ্ঞেস করলেন, কেমন লাগল? বীরু বললেন, দেখিনি। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বীরেন জেঠু বলছিলেন, ছবিটা সেই সময় না চললেও মিউজিক কিন্তু খারাপ হয়নি। পরিতাপের বিষয় এই, ফিল্মটা এখন পাওয়া যায় না। এরকম কত কিছুই আমরা হারিয়েছি।
আরও পড়ুন
রামকৃষ্ণকে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শোনালেন তরুণ নরেন্দ্রনাথ, গুরুর মৃত্যুশোকেও সঙ্গী সেই গানই
চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের একটি পমেরেনিয়ান কুকুর ছিল প্রথমদিকে, নাম ‘সিল্কি’। সিল্কি মারা যাবার পর চিন্ময়বাবু আরেকটি পোষ্য রেখেছিলেন একই জাতের, ওর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘শিল্টু’ (সিল্কি-২ থেকে শিল্টু)। খুব ভালবাসতেন শিল্টুকে। নিজে সবসময় দেখাশোনা করার সময় না পেলেও মাঝেমাঝে নিজের হাতে পাউডার মাখাতেন। সে মাঝেমাঝে উঠে বসত হারমোনিয়ামের উপর, আবার বকা খেয়ে নেমে যেত। একদিন রাতে দেড়টা-দুটো নাগাদ ফাংশন থেকে এসে একটু খেয়ে শুয়েছেন চিন্ময়। রাতে বৃষ্টি শুরু হলে ঘরের জানালাটা বন্ধ করে দেন। এদিকে শিল্টু থেকে রয়ে যায় জানালার বাইরে। সকালে উঠে খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে চিন্ময় দেখেন বাইরে তাঁর পোষ্যর লোম সারারাত ভিজে ফুলে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ডাকলেন, অরুণ, শিগগির আয়। শেষে পরিচারক অরুণের সেবাশুশ্রূষায় ভালো হয়ে ওঠে শিল্টু। ঘুম ভেঙে যাবে বলে সারারাত বৃষ্টিতে ভিজেও একবারও ডাকেনি চিন্ময়ের পোষ্য।
এই ঘটনার কথা চিন্ময়ের শিষ্য পার্থ চক্রবর্তীকে বলছিলেন চিন্ময়ের সর্বকনিষ্ঠ খুড়তুতো ভাই ধীরেন চট্টোপাধ্যায়। এ-বছরের জুলাই মাসে চিন্ময়ের প্রয়াণবার্ষিকীর দিনকয়েক আগে তিনিও চলে গেলেন তাঁর ছোড়দার কাছে। রেখে গেলেন শুধু স্মৃতি।
রবীন্দ্রসদনের শুরুর দিনগুলি থেকেই কমিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন চিন্ময় এবং দেখাশোনার ভার নিয়েছিলেন পরে। রবীন্দ্রসদনে কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হলে অনেক শিল্পীই তা এসে বলতেন তাঁর কাছে। গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের স্বামী প্রখ্যাত গীতিকার শ্যামল গুপ্তর বন্ধু ছিলেন চিন্ময়, সেইসূত্রেই আলাপ। একবার সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্রসদনে প্রোগ্রাম করতে গেছেন। প্রোগ্রামের আগে চিন্ময়বাবুকে বললেন, দেখুন হলের টয়লেটগুলো এত অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন রাখে। এত সুন্দর একটা প্রেক্ষাগৃহ, টয়লেটগুলোর কথা ভাবলে খুব খারাপ লাগে আমার। চিন্ময়বাবু এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সব টয়লেটগুলো পরিষ্কার করিয়ে দিলেন। বললেন, কী বলব বলুন এখানে যে স্যুইপারগুলো থাকে তাদের পরিবারের লোকজন রাতদিন টয়লেটগুলো ব্যবহার করে নোংরা করে রাখে। তারা বললেও শোনে না।
আরেকবারের কথা। প্রখ্যাত গীতিকার প্রণব রায়ের পুত্র প্রদীপ্ত রায় পিতার স্মৃতিতে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন রবীন্দ্রসদনে। সঞ্চালনা করবেন চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। চিন্ময়দাকে ডেকে বললেন বিশেষ একজনের কথা যে উনি এসে কিছু গণ্ডগোল করতে পারেন। চিন্ময়বাবু অভয় দিয়ে বললেন, আমি প্রথম থেকে থাকব, চিন্তা করিস না।
সেদিনের ঘটনার আসল জায়গাটা এখনও বলা বাকি। মঞ্চে গাইছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, রামকুমার চট্টোপাধ্যায়, ফিরোজা বেগম এবং আরও অনেকে। চিন্ময় বললেন, আমিও দুটো গান গাইব। কিন্তু শিল্পীর মিউজিক হ্যান্ডস রাজা রায় ও কমল পণ্ডিত সেদিন অনুপস্থিত, কারণ শিল্পীর গাইবার কথা ছিল না। বিশেষ কোনো যন্ত্রানুসঙ্গ ছাড়াই সেদিন শিল্পী গাইলেন প্রণব রায়ের লেখা দু’টি গান – আজ বিদায় রাতের আঁধারে (কমল দাশগুপ্তর সুরে শিল্পী নিজেই গেয়েছিলেন রেডিওতে) এবং যদি ভুল ভেঙে যায় কোনদিন (সুধীরলাল চক্রবর্তীর সুরে রেকর্ড করেছিলেন উৎপলা সেন)। চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে এইরকম দুইখানি আধুনিক গান শুনে আশ্চর্য হয়েছিলেন সবাই, প্রদীপ্ত কাকু নিজেও। কাকুর মুখেই শুনেছিলাম এই ঘটনা। গানদুটি সংরক্ষিত রয়েছে ওঁর কাছে, হয়ত অদূর ভবিষ্যতে নিজের কোম্পানি ‘পেরিনিয়াল রেকর্ডস’ থেকে প্রকাশ করবেন সিডিতে।
আজকের শুভদিনে ‘ছিন্ন দিনের খণ্ড আলোর মালা’ দিয়ে এই স্মৃতির ডালা সাজালাম চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের অগণিত অনুরাগীদের উদ্দেশে। তাঁর কথা আর গান দিয়েই আগামীতেও তাঁকে আমাদের হৃদয়ে ধরে রাখতে চিরপ্রতিজ্ঞ আমরা।
তথ্যঋণ: বীরেন চট্টোপাধ্যায়, ধীরেন চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ্ত রায়, পার্থ চক্রবর্তী ও সপ্তর্ষি ঘটক
Powered by Froala Editor