যুদ্ধ তো শুধু সীমান্তেই হয় না, কখন যেন তার সঙ্গে জড়িয়ে যায় দেশের সমস্ত মানুষ। এই জড়িয়ে পড়ার পিছনে একদিকে যেমন থাকে দেশপ্রেম, অন্যদিকে তেমনই থাকে ঘৃণা, বিদ্বেষ এবং অসহিষ্ণুতা। এমনকি কিছুদিন ধরে লাদাখ অঞ্চলে চলতে থাকা ভারত-চিন সীমান্ত সংঘর্ষের ভিতর দিয়েও একধরনের চিন-বিদ্বেষী মানসিকতা গড়ে উঠেছে অনেক ভারতীয়র মনেই। আর এই বিদ্বেষ তাই স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত করেছে এদেশে বসবাসকারী চিনা মানুষদের।
ভারত এবং চিন, দুই দেশের যোগাযোগ বহু প্রাচীন। আধুনিক বিশ্বায়িত পৃথিবীতেও ৭০ বছর হয়ে গেল দুদেশের বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগ। দুই দেশেরই অনেক অধিবাসী কর্মসূত্রে অথবা শিক্ষার জন্য অন্য দেশে বসবাস করে। আর এই দুই দেশের মধ্যে সামরিক প্রতিযোগিতা তাই বর্তমানে সামাজিক নীতিপ্রণেতাদের যথেষ্ট উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ইতিমধ্যে দেশের নানা প্রান্তে স্লোগান উঠেছে 'বয়কট চায়না' অথবা 'চিনাদের উচিত শিক্ষা দাও'। সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে পৃথিবীর সমস্ত জায়গার মানুষ সাক্ষী থাকছেন ভারতীয়দের এই বিদ্বেষপূর্ণ মানসিকতার। অবশ্য ভারতে বসবাসকারী অনেক চিনা নাগরিক তাঁদের পরিবারকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, ভারতীয়দের হৃদয় অনেক উষ্ণ। তাই আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।
তবে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে বর্তমানে ভারতে বসবাসকারী চিনারা বেশ দুশ্চিন্তার মধ্যেই আছেন। ভারত-চিন অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ সাকিব জানিয়েছেন এদেশের অনেক চিনা নাগরিক আতঙ্কে গৃহবন্দি হয়ে আছেন। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে দেখা করতেও ভয় পাচ্ছেন। অন্যদিকে জহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক বি আর দীপক মনে করছেন, চিনে বসবাসকারী ভারতীয়দের অবস্থাও অনুরূপ হওয়াই স্বাভাবিক। আর এই আতঙ্কের পরিবেশকে আরও উসকে দিয়ে চিন সরকার ঘোষণা করেছে, তাদের সমস্ত নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। অন্যদিকে কোনো সরকারের তরফ থেকেই এখনও অন্য দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার কোনো ঘোষণা করা হয়নি। বরং ক্রমশ বেড়েই চলেছে জমে থাকা বিদ্বেষ। কবে এই সংঘর্ষের মীমাংসা হবে, সেদিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
নতুন করে সেনা মজুত শুরু নিয়ন্ত্রণরেখায়, ভারত-চিনের মধ্যে গাঢ় হচ্ছে যুদ্ধ-সম্ভাবনা