গত বছর নভেম্বর মাসে পৃথিবী থেকে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিল চিনের মহাকাশযান চ্যাং-৫। না, কোনো মানুষকে নয়, বরং সেই অভিযানে পাঠানো হয়েছিল ধানের বীজ। মহাশূন্যে যা প্রায় ২৩ দিন প্রদক্ষিণ করে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহকে। সম্প্রতি মহাকাশ থেকে ঘুরে আসা প্রায় ৪০ গ্রাম ধান্যদানা পৃথিবীর মাটিতে রোপণ করেছিলেন চিনা গবেষকরা। সম্প্রতি সেই দানাগুলিতেই প্রাণসঞ্চারিত হতে দেখা গেল ল্যাবরেটরিতে। মহাকাশ-ফেরত এই ধানই ভবিষ্যতে খাদ্যাভাব মেটানোর হাতিয়ার হয়ে উঠবে বলে অভিমত চিনা বিশেষজ্ঞদের।
চিনের গুয়াংডং প্রদেশের সাউথ চায়না এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জড়িত ছিলেন এই গবেষণার সঙ্গে। মহাকাশে মহাকর্ষহীন অবস্থা দানাশস্যের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে, তা নিরীক্ষণ করাই ছিল তাঁদের মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি বিভিন্ন কসমিক রেডিয়েশন আদৌ ধানের উৎপাদনশীলতা বা ফলনের হার বৃদ্ধি করা কিনা, সেই অনুসন্ধান চালাতেই এমন উদ্যোগ চিনা গবেষকদের।
তবে এই প্রথম নয়। ১৯৮৭ সাল থেকেই ২০০-র বেশি প্রজাতির শস্য ও ফলের বীজ মহাশূন্যে পাঠিয়েছে চিন। তার মধ্যে রয়েছে কমলালেবু, তুলো, টম্যাটো ইত্যাদি বিভিন্ন উদ্ভিদ। মহাজাগতিক বিকিরণ এবং মাইক্রোগ্র্যাভিটি এই ধরনের বীজের উৎপাদনশীলতা অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন চিনের গবেষকরা। এবার সেই সূত্র ধরেই মহাজাগতিক ধান্য গবেষণা।
মহাকাশ-ফেরত বীজগুলি অঙ্কুরিত হওয়ার পরই উচ্ছ্বসিত চিনা গবেষকরা। এবারেও যে পরীক্ষা সফল হতে চলেছে, সে ব্যাপারে তাঁরা যথেষ্ট আশাবাদী। চারাগুলির উচ্চতা বর্তমানে প্রায় ১ সেন্টিমিটার। তবে মহাকাশে অভিযোজনের কারণে কিছুদিনের মধ্যেই তাদের মধ্যে বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা। প্রাথমিক গবেষণা সফল হলে, ল্যাবে ফলানো ধানের বীজ সংগ্রহ করে তা দেওয়া হবে কৃষকদের। সাধারণ মাটিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে দেখা হবে সেই ধান। তারপরই তা চলে আসবে বাজারে। তবে সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ বছর সময় তো লাগবেই।
আরও পড়ুন
উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ের কারণ কী? বিস্তারিত গবেষণাপত্র প্রকাশ বিজ্ঞানীদের
চিনের সংবাদমাধ্যমে ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছে এই নতুন ‘উচ্চ ফলনশীল’ ধান। তাদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাইস ফ্রম হেভেন’। অর্থাৎ, স্বর্গীয় চাল। আক্ষরিক অর্থে তা স্বর্গীয়ই বটে। এখন দেখার ভবিষ্যতে এই ধানের ফলন সত্যিই আসন্ন বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাবকে মেটাতে পারে কিনা…
আরও পড়ুন
বিষ্ণুপুর ঘরানার ‘শেষ’ কিংবদন্তি, সঙ্গীতের পাশাপাশি ডুবে ছিলেন গবেষণাতেও
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মানুষের মতোই সংস্কৃতি বদলায় পাখিদেরও, জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা