ভারতের বুকে কোনো বিদেশির মূর্তি কেন থাকবে, এমন একটা প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। তবে একথা ঠিক, বিদেশের মাটিতে কোনো ভারতীয়র মূর্তি উন্মোচিত হচ্ছে শুনলে আমাদের মন আনন্দিত হয়ে ওঠে। আর ঠিক তেমনই ঘটনা ঘটতে চলেছে আবারও। এবার চিনের মাটিতে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে ভারতীয় চিকিৎসক দ্বারকানাথ কোটনিশের ব্রোঞ্জ মূর্তি। সম্প্রতি সিজিয়াজুয়াং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এই খবর জানানো হয়।
দ্বারকানাথ কোটনিশ শুধুই একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক ছিলেন না, তিনি ছিলেন ভারত ও চিনের পারস্পরিক সম্পর্কের নিরিখে একজন উল্লেখযোগ্য চরিত্র। তখন সারা পৃথিবী জুড়েই উত্তাল পরিস্থিতি। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যেই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছে ভারত। অন্যদিকে অন্ধকার ইতিহাসহীনতার যুগ পেরিয়ে চিনের মানুষও দিনবদলের যাত্রায় পা মিলিয়েছেন। এই সময় দুই দেশের মুক্তিকামী মানুষের চেতনা যে এক জায়গায় মিলে যাবে, তাতে আর সন্দেহের কী আছে?
বিশ্বযুদ্ধের সময় চিনের স্বাস্থ্যপরিষেবা যাতে পুরোপুরি ভেঙে না পড়ে, তাই ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল পাঠানো হয়েছিল। সেই দলেই ছিলেন দ্বারকানাথ কোটনিশ। ১৯৩৮ সালে তাঁরা পা দেন চিনের মাটিতে। এরপর সেখানে শিক্ষকতার পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েন কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গেও। ১৯৪২ সালে পাকাপাকিভাবে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হয়ে যান তিনি। আর সেইবছরই মৃত্যু হয় কোটনিশের। চিনে তাঁর বিবাহিত স্ত্রী গুয়ো কিংলান থেকে যান।
চিনের নানা অঞ্চলে দ্বারকানাথের নামাঙ্কিত হাসপাতাল, তাঁর মূর্তি এবং আরও অনেক চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়। তাঁকে বিদেশি হিসাবে গ্রহণ করেননি কেউই। বরং মহান বিপ্লবের অংশীদার এবং নেতা মাওয়ের সঙ্গী হিসাবেই তাঁকে মনে রেখেছেন সকলে। শোনা যায় কোটনিশের মৃত্যুতে মাও নিজেও ভেঙে পড়েছিল্রন। এর মধ্যেই ভারত-চিন দ্বন্দ্ব পরিস্থিতিতে চিনে কোটনিশের মূর্তি উন্মোচনকে মৈত্রীর বার্তা বলে মনে করছেন অনেকে। তবে সেই রাজনৈতিক তরজার বাইরে গিয়েও বলা যায়, এইসব মানুষের জীবন বারবার প্রমাণ করে যায় পৃথিবীতে মানুষের ইতিহাসটা একই খাতে এগিয়েছে। সেখানে জাতি-রাষ্ট্রের বিভাজন মানবতার থেকে বড় হয়ে ওঠেনি কোনোদিন।
আরও পড়ুন
লেকের পাশে চিনা ভাষায় লেখা সংকেত, স্যাটেলাইট ইমেজে ধরা পড়ল চিনের ‘বার্তা’
Powered by Froala Editor