স্কুলের ফি মেটাতে ভিক্ষাবৃত্তিতে শিশুরা, করোনাকালে এমনই ছবি কর্ণাটকে

লকডাউনের সময় কাটিয়ে আবার পথে নেমেছে মানুষ। আর সেইসঙ্গে পথে নেমেছে অসংখ্য শিশু। তাদের একহাতে ভিক্ষার পাত্র, অন্যহাতে স্কুলের ফি চার্ট। পথচলতি মানুষদের কাছে কাতর আবেদন, দয়া করে তাদের পড়াশোনার স্বপ্ন সফল করতে সাহায্য করুন। করোনা পরিস্থিতিতে এমন দৃশ্য সত্যি উদ্বেগে ফেলেছে কর্ণাটক প্রশাসনকে। তবে শুধু কর্ণাটক নয়, সারা দেশেই ছবিটা প্রায় একইরকম। বিশেষ করে বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়াদেরই রাস্তায় দেখা যাচ্ছে বেশি করে।

কর্ণাটক চাইল্ড রাইট ট্রাস্টের বক্তব্য অনুযায়ী, শিশুরা শুধু যে ভিক্ষা করছে এমনটা নয়। কেউ কেউ পেন বা অন্যান্য স্টেশনারি সামগ্রী নিয়ে ফেরি করছে। কারোর অভিভাবকরা লকডাউনের সময় কাজ হারিয়েছেন, কারোর ব্যবসার অবস্থা শোচনীয়। ফলে ছেলেমেয়েদের স্কুলের ফি জমা দিতে ব্যর্থ তাঁরা। এদিকে স্কুল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সঠিক সময়ে ফি জমা না দিলে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হবে। অতএব রাস্তায় নেমে ভিক্ষা করা ছাড়া আর উপায় নেই। কোথাও আবার শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকরাও রাস্তায় নেমে ভিক্ষা করছেন।

তবে দৃশ্যের পাশাপাশি উদ্বেগের আরও কারণ আছে বলে মনে করছেন অনেকে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে শিশুরা যে ফি সার্টিফিকেট দেখাচ্ছে, সেগুলো ভুয়ো। সংশ্লিষ্ট স্কুলে ওই নামে কোনো পড়ুয়াই নেই। হতে পারে কোনো বড়ো চক্র এই সুযোগে অপহৃত শিশুদের নিয়ে প্রতারণার চক্র খুলেছে। সরকারের সমীক্ষাও বলছে গত ৬ মাসে শিশু পাচার, শিশু শ্রমিক নিয়োগ এবং শিশুদের প্রতি হিংসার ঘটনাও প্রায় ৩ গুণ বেড়ে গিয়েছে। উপযুক্ত সামাজিক সচেতনতা এবং সরকারি উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যার সঙ্গে লড়াই করা অসম্ভব।

ব্যাঙ্গালোর শহরে ইতিমধ্যে সরকারের সঙ্গে ৮টি এনজিও একযোগে পরিস্থিতি মোকাবিলার উদ্যোগ নিয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ৮টি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী। কিন্তু সারা দেশের তুলনায় এই উদ্যোগ অতি সামান্য। করোনা পরিস্থিতি যাতে শিশুদের শিক্ষার স্বপ্ন নষ্ট করতে না পারে, তার দিকে নজর দিতে হবে সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে। এই করোনা পরিস্থিতিকেও শিশুদের বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। নাহলে বর্তমান সময় যেমন বিপর্যস্ত, ভবিষ্যতও সুন্দর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা অধরাই থেকে যাবে।

Powered by Froala Editor