২৫ বছরে ২০ লক্ষ গাছ - সন্তান ও প্রকৃতি নিয়ে এক ‘সিঙ্গল মাদার’-এর লড়াই

চিল্কাপাল্লি আনাসুয়াম্মা। তেলেঙ্গানার পাস্তাপুর গ্রামের এক সাধারণ বাসিন্দা। কিন্তু তাঁর কাজকর্মের ব্যাপ্তি তাঁকে সাধারণ থেকে অসাধারণ করেছে। তিনি একাধারে একজন সিঙ্গল মাদার। তার থেকেও বড় পরিচয়, ইনি একজন পরিবেশকর্মী। ৪৯ বছরের এই জীবনে তিনি ২২টা গ্রাম জুড়ে প্রায় ২০ লক্ষ গাছ লাগিয়েছেন। যার স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত থেকে নিউ ইয়র্ক।  

কিন্তু শুরুটা এরকম ছিল না একেবারেই। খুব ছোট বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। আর্থিক দুরবস্থার জন্য, পড়াশোনাও হয়নি। বিবাহ-পরবর্তী সময় যে সুখের ছিল, তা নয়। এমন সময়, ১৯৯৩ সালে এল সেই দুর্দিন। ঘুম থেকে উঠে আনাসুয়াম্মা দেখেন, তাঁর স্বামী বেপাত্তা। তারপর থেকে, কোনও খবর মেলেনি তাঁর। তখন, আনাসুয়াম্মার বয়স মাত্র ২৫। সঙ্গে রয়েছে তাঁর দত্তক সন্তান। পরিবার এবং আত্মীয় প্রতিবেশীরা প্রতিনিয়ত কথা শুনিয়ে যেত। কিন্তু থেমে থাকেননি তিনি। নিজের এবং নিজের ছেলের বেঁচে থাকার জন্য চাকরির চেষ্টা করতে থাকেন।

এমন অবস্থা যখন, তখন একদিন তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় ডেকান ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (ডিডিসি) নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে। সেই থেকে শুরু হল আনাসুয়াম্মা আর ডিডিসি’র কাহিনি। এখানে কাজ শুরু করলেন তিনি। সেই সঙ্গে শুরু করলেন বৃক্ষরোপণের চেষ্টা। ডিডিসি থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করলেন নিজের কাজ, নিজের ‘পৃথিবী মা’-কে বাঁচানোর কাজ। প্রতিটা জায়গার মাটি বুঝে তারপর গাছ লাগান তিনি। একটা দুটো করতে করতে, ২৫ বছর পরে আজ সেই গাছের সংখ্যা ২০ লক্ষ! তেলেঙ্গানার ২২টি গ্রামে বিস্তৃত আছে তাঁর এই কাজ। স্বীকৃতিও মিলেছে। ভারত থেকে তো বটেই, বিদেশ থেকেও। সম্প্রতি ইউনেস্কোর তরফ থেকে আনাসুয়াম্মা এবং ডিডিসি-কে সম্মানিত করা হয় নিউ ইয়র্কে। পুরস্কৃত করা হয় তাঁদের এই বিস্তৃত কাজকে।

একটা সময় যারা আঙুল তুলেছিল, আজ তাঁদের দিকেই যেন ফিরতি জবাব দিয়েছেন ৪৯ বছরের আনাসুয়াম্মা। সম্পূর্ণ একা হাতে নিজের ছেলেকে মানুষ করাই শুধু নয়, তিনি সেবা করে চলেছেন তাঁর পৃথিবী মায়েরও। এখনও থামেননি তিনি, আনাসুয়াম্মারা থামতে জানেন না যে!

Latest News See More