সিকল-সেল অ্যানিমিয়ার মতো মারাত্মক জিনঘটিত রোগ নিয়ে জন্মেছেন নোমেশ ভার্মা। উপযুক্ত চিকিৎসা তো দূরের কথা, সামান্য খাবারের জন্যও ছোটো থেকেই জীবন সংগ্রামে নেমে পড়তে হয়েছে তাঁকে। তবে তার পরেও লড়াই ছাড়েননি। ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) রাইপুর (Raipur) জেলার নোমেশ ভার্মা (Nomesh Verma) এখন তাঁর মতো আরও অনেক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষের বাঁচার প্রেরণা। তাঁদের প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদানের পাশাপাশি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতেও সাহায্য করে চলেছেন তিনি। আর তাঁর এই কাজে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে নানা সরকারি সংস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন এনজিও-ও। তিনি নিজেও ‘দিব্যাঙ্গ কল্যাণ সমিতি’ নামের একটি সংগঠনের প্রেসিডেন্ট।
ছত্তিশগড়ের রাইপুর জেলায় নিতান্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় নোমেশের। ছোটো থেকে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়তেন তিনি। তবে সেই অসুস্থতার কারণ জানা যায়নি বহুদিন। তাঁর ৭ বছর বয়সে প্রথমবার রক্তপরীক্ষা করার কথা বলেন চিকিৎসকরা। আর তখনই ধরা পড়ে সিকল-সেল অ্যানিমিয়া। এই রোগে রক্তের লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন অংশটিই থাকে না। ফলে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহও হয় খুব কম। অবশ্য শুধু এটুকুই নয়, পাশাপাশি চোখের সমস্যাও দেখা দেয় এই সময়েই। তার কারণও ছিল অবশ্য রক্তের এই রোগটি। ক্রমশ দৃষ্টিশক্তি কমে আসে তাঁর।
যতদিন তাঁর মা বেঁচে ছিলেন, তিনি নিয়মিত নিজের রক্ত দান করতেন ছেলের জন্য। কিন্তু ১৪ বছর বয়সে নোমেশের মা মারা যান। এরপর তাঁকে দেখভাল করারও কেউ ছিল না। তাঁর বাবা আবার বিবাহ করেন। কিন্তু মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিতই থাকেন নোমেশ। তারপরেও নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু এরপরেই বাবার আশ্রয় ছেড়ে তাঁকে দিদিমার কাছে গিয়ে থাকতে হয়। তখন থেকেই রোজগারের চেষ্টা শুরু করেন নোমেশ। অসুস্থ শরীরেও বাজারে গিয়ে সবজি বিক্রি করেছেন। কিন্তু বেশিদিন সেই কাজ করতে পারেননি।
ঠিক এই সময়েই নোমেশের সঙ্গে পরিচয় হয় ‘সাইটসার্ভে’ নামে একটি এনজিও-র। দেশের নানা প্রান্তে দৃষ্টি-প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার কাজ করেন তাঁরা। এই সংস্থার উদ্যোগেই নোমেশ ইলেক্ট্রিক্যাল টেকনিশিয়ানের ট্রেনিং শুরু করেন। এরপর নিজের রোজগারের রাস্তা খুলে যায়। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকতে চাননি নোমেশ। তাঁর মতো আরও মানুষদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসেন তিনি। যুক্ত হন রাইপুর জেলার ‘দিব্যাঙ্গ কল্যাণ সমিতি’-র সঙ্গে। কিছুদিনের মধ্যেই সংস্থার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নোমেশ।
আরও পড়ুন
বাঁশ দিয়ে সাইকেল! উদ্যোগ ছত্তিশগড়ে
করোনাকালেও থেমে থাকেননি তিনি। সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে মিলিতভাবে জেলার নানা প্রান্তে রেশন পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছেন। তৈরি করেছেন বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের জন্য আলাদা তালিকাও। এছাড়াও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য গড়ে তুলেছেন আশ্রয়। কোভিড সচেতনতার প্রচারও করেছেন সমানতালে। নিজে হাতে মাস্ক তৈরি করে বিলি করেছেন জেলার নানা প্রান্তে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেও মানুষ সমাজ গঠনের কাজে এগিয়ে আসতে পারেন, শুধু প্রয়োজন একটু সহযোগিতা। সেই বার্তাই পৌঁছে দিতে চান নোমেশ।
আরও পড়ুন
বৃক্ষচ্ছেদন রুখতে গাছের গায়ে ভগবানের ছবি সাঁটা ছত্তিশগড়ে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বছর পেরিয়েও সুস্থ অ্যানিমিয়া ও থ্যালাসেমিয়া রোগীরা, আশা জাগাচ্ছে ক্রিস্পার প্রযুক্তি