প্রতিযোগিতা, মানেই তো এক ইঁদুরদৌড়। লক্ষ্য থাকবে সামনের দিকে, কীভাবে একজনকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে। হ্যাঁ, এগিয়ে তো যেতেই হবে। নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। কিন্তু ওই যে, যাকে বলে স্পোর্টিং স্পিরিট, সেটাও আসলে ভীষণ দরকার। প্রতিপক্ষকে সম্মান করতেও হবে। যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে। অনেকে বলেন, আজকাল নাকি এসব আর দেখাই যায় না। আজকাল সব খেলাতেই দুর্নীতি, অসৎ পন্থা অনেক বেড়ে গিয়েছে। সবাই শুধু জেতার জন্যই মুখিয়ে থাকেন। কই, না তো! সোমবারের চেজেবল মাস্টার্স সেমিফাইনাল তো অন্য এক নজির স্থাপন করল। মানীর মান দিতে পারেন এমন মানুষ আজও হারিয়ে যাননি পৃথিবী থেকে।
খেলাটার নাম দাবা। ৬৪ ঘরের বোর্ডের দুপাশে বসে থাকেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। আর ঘরের নিশ্ছিদ্র নিরবতার মধ্যে টিক টিক করে যায় ঘড়ির কাঁটা। তবে এখন লকডাউনের সময় আর দর্শকরা সামনে থেকে দেখতে পাচ্ছেন না যুযুধান দুই পক্ষকে। প্রতিদ্বন্দ্বীরাও মুখোমুখি বসে নেই। পুরোটাই হচ্ছে অনলাইনে, অর্থাৎ কম্পিউটার স্ক্রিনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। আর এখানেই শুরু হল সমস্যা। চেজেবল মাস্টার্সের সেমিফাইনালে তখন চলছে র্যা পিড রাউন্ড। দান দিতে হবে ঘড়ির কাঁটা মেনে অল্প সময়ে। আর এর মধ্যেই ডিং লিরেনের ইন্টারনেট কানেকশন চলে গেল। স্বাভাবিকভাবেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দান দিতে পারলেন না ডিং লিরেন। আর খেলার পূর্বঘোষিত নিয়ম অনুযায়ী তিনি হেরে গেলেন। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনকে আবার জয়ী ঘোষণা করা হল।
এর আগে সেমিফাইনালের ব্লিৎজ রাউন্ডে একটি ম্যাচে দুজনে ড্র করেছেন। আরেকটিতে জিতেছেন কার্লসেন। আর র্যা পিড রাউন্ডের শুরুতেই ঘটে গেল অঘটন। অবশ্য ততক্ষণে ৪৩ দান খেলা হয়ে গিয়েছে। দর্শকরাও প্রায় বুঝেই গিয়েছিলেন, এই ম্যাচে কার্লসেন জিততে চলেছেন। অন্যদিকে লিরেন কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ছাড়েননি। সব মিলিয়ে টানটান উত্তেজনার মধ্যেই এগোচ্ছিল খেলা। এই হঠাৎ যবনিকা নেমে আসাটা তাই কারোরই ঠিক পছন্দ হল না।
র্যা পিড রাউন্ডের প্রথম খেলা তো শেষ হল। দ্বিতীয় ম্যাচে আবার মুখোমুখি দুজন। দর্শকরাও তাকিয়ে আছেন কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে। কিন্তু এখানে চমক লাগল দর্শকদের। মাত্র চার দানেই কিস্তি মাত করলেন লিরেন। আর তাও উল্টোদিকে যখন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কার্লসেন! নাকি কার্লসেন নিজেই আত্মসমর্পণ করলেন?
আরও পড়ুন
১৭০ বছর আগেই হারিয়েছিলেন সাহেবকে, ভুলে যাওয়া এক বাঙালি দাবাড়ুর গল্প
হ্যাঁ, ঠিক তাই। কার্লসেন তাঁর কুইনকে ভেবেচিন্তেই বসিয়ে দিয়েছেন লিরেনের বিশপের সামনে। এরপর বাকি দুটি ম্যাচে অবশ্য কেউই জিততে পারলেন না। তবে ব্লিৎজ রাউন্ডের একটি ম্যাচে এগিয়ে থাকার জন্য কার্লসেনই জিতে গেলেন। এবং জিতে গেলেন অসংখ্য দর্শকের হৃদয়। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন, লিরেনকে তিনি প্রতিযোগী হিসাবে যথেষ্ট সম্মান করেন। তাঁর সঙ্গে এক বোর্ডে লড়াই করতে ভালোবাসেন। সেই লড়াইটা না থাকলে জেতার কোনো আনন্দ নেই। শেষ দুটি ম্যাচের একটিতেও হেরে গেলে হয়তো ফাইনালে পৌঁছতে পারতেন না কার্লসেন। কিন্তু একটা যান্ত্রিক গোলযোগের সুযোগ নিয়ে কি নিজের যোগ্যতার পরিচয় দেওয়া যায়? যায় না। খেলা তো শুধু নিয়মের নয়। খেলা যে আত্মসম্মানেরও প্রশ্ন নিয়ে হাজির থাকে।
আরও পড়ুন
ভারতের মুকুটে নতুন পালক, বিশ্ব যুব দাবা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক প্রজ্ঞানন্দের
Powered by Froala Editor