নিজে একবেলা খেয়েও পোষ্য কুকুরদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন চেন্নাইয়ের মহিলা

চেন্নাইয়ের মাইলাপুর এলাকার একটি বস্তিতে থাকেন মীনা। প্লাস্টারহীন দেওয়াল দেওয়া দুখানি ছোটো ঘর আর সামনে অপ্রশস্ত বারান্দা, এর মধ্যেই বাস করেন ১৪ জন। মীনা এবং তাঁর ১৩টি পোষ্য কুকুর। বিগত ২১ বছর ধরে এদের নিয়েই তাঁর সংসার। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে সম্প্রতি সেই সংসারে দেখা দিয়েছে অনটন। দেশের আর পাঁচটা খেতে খাওয়া মানুষের রোজগার যেমন বন্ধ করেছে লকডাউন, মীনার জীবনেও তেমন দুর্দিন নেমে এসেছে। তাঁর সংসার চলে অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করে। কিন্তু লকডাউনের ফলে এখন তাঁর কাজ বন্ধ। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রাণ বাঁচাতে।


দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটা গুজব উঠেছিল। এই রোগ নাকি কুকুর-বেড়ালের মতো পশুদের শরীর থেকেই সংক্রমিত হয়। এই গুজবের ফলে অনেকেই তাঁদের পোষ্য প্রাণীদের বাড়ি থেকে বিদায় করেছিলেন। রাস্তার প্রাণীদের অবস্থাও হয়ে উঠেছিল শোচনীয়। কিন্তু তারপরেও মীনা তাঁর কুকুরদের ত্যাগ করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, কর্মহীন এই সময়ে শেষ সঞ্চয়টুকু দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁর পোষ্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে। অবশ্য সেই সঞ্চয়ই বা কতটুকু? লকডাউনের দুমাস কেটে গেল। এই দুমাস কোনো রোজগার নেই তাঁর। তাই পোষ্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে নিজে সারাদিনে একবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।


৩৯ বছরের মীনা শুধু তাঁর পোষ্যদেরই নয়, রাস্তার কুকুরদেরও দুবেলা খাওয়ান। তবে এখন তো তাঁর আর সেই সামর্থ্য নেই। কিছু সামাজিক সংস্থা মহামারীর ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন তাঁর কাছে। একজন মানুষের মতো সামান্য খাদ্যদ্রব্য। সেটুকুই এখন তাঁর সম্বল। আর তাই নিজে অভুক্ত থেকেও পরিবারের বাকি সদস্যদের মুখে কীভাবে খাবার তুলে দেবেন, সেকথাই ভাবছেন মীনা। এই কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁর এই ভালোবাসা এবং আত্মত্যাগের কাহিনি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমেও। যদিও এখনও অন্য কোনো মানুষের সাহায্য পাননি তিনি। তবে দুঃসময় আর বেশিদিন হয়তো স্থায়ী হবে না, এই আশাটুকু নিয়েই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মীনা।

Powered by Froala Editor