৭০ বছর পর ভারতে ‘ফিরছে’ চিতা

আজ থেকে ঠিক সত্তর বছর আগের কথা। ১৯৫২ সাল। ভারত সরকার ঘোষণা করেছিল এ-দেশ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়েছে চিতা (Cheetah)। এবার দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে ঐতিহ্যবাহী এই প্রাণীটিকে দেশে ফিরিয়ে আনছে ভারত সরকার। 

তবে উত্তরবঙ্গ, উত্তরাখণ্ড কিংবা মধ্যপ্রদেশে যে হামেশাই লোকালয়ে চিতা ঢুকে পড়ে সংবাদ উঠে আসে? তবে বিলুপ্ত বলা হচ্ছে কেন এই প্রাণীকে? অনেকের মনেই জাগবে এই প্রশ্ন। আদতে আজ আমরা ‘চিতা’ বলে যাকে চিনি, তা হল চিতাবাঘ। যা সম্পূর্ণ ভিন্ন ফিলাইন প্রজাতি। আসল চিতা ভারতের কয়েকটি চিড়িয়াখানায় দেখতে পাওয়ার সুযোগ থাকলেও, বন্য চিতা ভারতে নেই।

এবার সেই অভাব পূরণ করতেই নামিবিয়া থেকে ৮টি বন্য চিতা আমদানি করছে ভারত। মধ্যপ্রদেশের কুনো-পালপুর জাতীয় উদ্যানে তৈরি করা হয়েছে চিতার জন্য বিশেষ বিচরণ ক্ষেত্র। সেখানেই রাখা হবে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম এই বিড়ালকে। তবে সম্পূর্ণভাবে তাতে ক্ষতিপূরণ হবে না বললেই চলে। কারণ, নামিবিয়া থেকে যে চিতা নিয়ে আসা হচ্ছে, তা আদতে আফ্রিকান চিতা। আর আজ থেকে ৭০ বছর আগে ভারতে পাওয়া যেত এশিয়াটিক চিতা। শুধু ভারতই নয়। ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মায়ানমার, ইরাক, ইরান ও আরবের দেশগুলিতেও দেখা মিলত এই রাজকীয় প্রাণীটির। আফ্রিকান চিতার থেকেও যা ক্ষিপ্র ছিল বলেই অভিমত অনেকের। 

আশ্চর্যের বিষয় হল, ভারতই ছিল এই এশিয়াটিক চিতার সবচেয়ে বড়ো আবাসস্থল। তবে ক্রমাগত শিকার এবং নগরায়নের জেরে ভারত থেকে হারিয়ে যায় এই বিশেষ প্রজাতিটি। শুধু এশিয়াটিক চিতাই নয়, গোটা বিশ্বে সার্বিকভাবে বিপর্যস্ত চিতা প্রজাতি। বিপন্নপ্রায় প্রাণীদের রেডলিস্টে চিতাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার। বর্তমানে সবমিলিয়ে মাত্র ৭০০০ চিতা অবশিষ্ট রয়েছে বিশ্বজুড়ে। অন্যদিকে একমাত্র ইরানেই রয়েছে মাত্র ১২টি এশিয়াটিক চিতা। 

এর আগে ১৯৭০ সালে ইরান থেকে এশিয়াটিক চিতা আমদানি করার কথা চিন্তাভাবনা করেছিল ভারত। এমনকি অনেকটাই এগিয়েছিল সেই কাজ। তবে শেষ পর্যন্ত ইরানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠায়, তা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে বিগত পাঁচ দশকে সে-দেশেও আকস্মিকভাবে কমেছে চিতার সংখ্যা। তাই দেশের ৭৫ বছর পূর্তিতে নামিবিয়ার কাছে দ্বারস্থ হল ভারত। আফ্রিকার এই দেশেই সর্বোচ্চ সংখ্যক চিতার বসবাস। তবে আফ্রিকান এই প্রাণীটি ভারতীয় পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারবে কিনা সেটাই চিন্তায় ফেলেছিল প্রশাসনকে। শেষ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের অভিমত নিয়ে, বেছে নেওয়া হয়েছিল মধ্যপ্রদেশের অরণ্যটি। ২০২০ সালে সেই রিপোর্ট বিবেচনা করেই সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় আমদানির। আগামী আগস্ট মাসেই ভারতে এসে পড়বে ৮টি চিতা। তাদের কেন্দ্র করে মধ্যপ্রদেশ যে পর্যটকদের নয়া আকর্ষণ হয়ে উঠবে, তাতেও সন্দেহ নেই কোনো… 

Powered by Froala Editor