জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিটা মানুষ জানেন, একদিন তাঁকে মরতে হবে। কিন্তু মৃত্যুকে সহজভাবে গ্রহণ করার ক্ষমতা থাকে না অনেকেরই। অবশ্য অনেকে সেই অপ্রতিরোধ্য ভবিষ্যতকে নিয়েও রসিকতা করে গিয়েছেন। এবং সেই রসিকতার উদ্দেশ্য সবসময় যে মানুষকে হাসানো, এমনটা নয়। অনেক সময় মানুষ নিজের স্বভাবেই রসিকতা করে থাকে মৃত্যু নিয়ে। ঠিক তেমনই এক স্বভাবরসিক মানুষ ছিলেন চার্লস ভান্স মিলার। তাঁর জীবদ্দশায় পরিচিত মানুষরাই সেই রসিকতার পরিচয় পেয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুর পর সমস্ত দেশকে জানিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর অদ্ভুত খেয়ালের কথা।
সময়টা ১৯৪৬ সাল। কানাডার আদালতে চলছে এক অভিনব বিচার। একপক্ষে বাদী দাবি করছেন গত দশ বছরে তিনিই সবথেকে বেশি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। আর সেই সংখ্যাটা ১১। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় তাদের মধ্যে ৪ জন ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই মারা যায়। অন্যদিকে বিবাদী পক্ষের দাবি, মৃত সন্তান প্রসবকে সন্তান প্রসব বলে ধরা উচিত নয়। আর সেই দিক বিবেচনা করে বিগত ১০ বছরে কানাডায় ৪ জন মহিলা ৯টি করে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। ফলে তাঁদেরকেই সবচেয়ে বেশি সন্তানের জন্মদাত্রী বলে বিবেচনা করা হোক।
আদালতের রায়ে সেবার বিবাদী পক্ষেরই জয় হয়েছিল। দেশে ১০ বছরে সবচেয়ে বেশি প্রসবকারী নারী হিসাবে ৪ জনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল মিলারের যাবতীয় সম্পত্তির বিক্রয়মূল্য। হ্যাঁ, এটাই ছিল মিলারের উইল। তাঁর মৃত্যুর পরবর্তী ১০ বছরে যে মহিলা সবচেয়ে বেশি সন্তানের জন্ম দেবেন তাঁকে তাঁর সম্পত্তির বিক্রয়মূল্য দিতে হবে পুরস্কার হিসাবে। আজকের পরিবার পরিকল্পনার যুগে এমন একটা উইল কিন্তু বেশ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারত।
কানাডার টরন্টো শহরের একজন আইনজীবী ছিলেন মিলার। কিন্তু আইনের ব্যবসাতেও জীবনের হাসিমজা হারিয়ে ফেলেননি তিনি। উইল তৈরির সময় তাঁর বিবাহ হয়নি, পরেও হয়নি। উত্তরাধিকারী বলতে সরাসরি কেউ ছিলেন না। আর তাই সমস্ত উইল নিয়েই এক অদ্ভুত রসিকতা করেছেন তিনি। যেমন উইলে এক জায়গায় তিনি লিখেছেন তাঁর একটি হলি-ডে হোম তিন বন্ধুকে উপহার দেবেন। অথচ উইল তৈরির পরেই সেই বাড়ি তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার এক ক্যাথেলিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকার হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন কোনো প্রোটেস্টান্ট ব্যক্তিকে, স্বাভাবিকভাবেই সেই উইল পূরণ করতে কেউ এগিয়ে আসেননি। আবার এক জায়গায় লিখেছেন তাঁর রেসের মাঠের লগ্নি অর্থের ভাগীদার হিসাবে নিযুক্ত করছেন তিনজনের নাম। এঁদের প্রত্যেকেই রেসের খেলার ঘোরতর বিরোধী। অবশ্য তাঁদের মধ্যেও একজন এগিয়ে এসেছিলেন মিলারের ইচ্ছা পূরণ করতে।
১৯৩৬ সালে মিলারের মৃত্যুর পর এই উইল বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। অনেকেই এই উইলকে পাগলের প্রলাপ বলে বাতিল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কানাডার আদালত দায়িত্ব নেয় মিলারের শেষ ইচ্ছে পূরণ করার। তবে এমন ভয়ঙ্কর রসিকতা ইতিহাসে আর ঘটেছে কিনা, সেবিষয়ে সন্দেহ আছে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দুর্গাপুজোয় চাঁদার জুলুম আটকাতে নারীর ছদ্মবেশ, সাহেবের হাতে পাকড়াও 'অপরাধী'রা