কুমারী মেরির দুধেই বদলেছিল গুহার রং! আজও সন্তানের আশায় ছুটে আসেন লক্ষ লক্ষ মানুষ

প্যালেস্টাইনের ব্রেথলহেম শহরের বুকে দাঁড়িয়ে একটি চুনাপাথরের গির্জা। আর সেই গির্জাকে ঘিরেই মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। এমনকি এই মহামারী পরিস্থিতিতেও সেখানে মানুষের আনাগোনা বন্ধ করা যায়নি। আসলে এখানে আসা তো শুধু প্রার্থনার জন্য নয়, মানুষের বিশ্বাস এই গির্জার পাথর ধোয়া জলের মধ্যে আছে অলৌকিক ক্ষমতা। সন্তানহীন দম্পতি এই জল পান করলে কিছুদিনের মধ্যেই তাঁদের কোলে ফুটফুটে সন্তান আসবে, এমনটাই বিশ্বাস করেন খ্রিস্টানরা।

এই বিশ্বাস যত প্রাচীন, গির্জাটি কিন্তু তত প্রাচীন নয়। মাত্র ১৪৮ বছর আগে তৈরি হয়েছিল গির্জাটি। সেটা ১৮৭২ সাল। তবে তার আগেও এখানে মানুষের সমাগম লেগেই থাকত। তখন এখানে ছিল গুহা। চুনাপাথরের তৈরি গুহা। আর দেশবিদেশ থেকে মানুষ এসে সেই গুহার পাথর ধুইয়ে জল পান করে যেতেন। অবশ্য বিশ্বাসী খ্রিস্টানরা একে জল বলে মনে করেন না। তাঁদের বিশ্বাস, গুহাটি আসলে গুঁড়ো দুধের তৈরি। আর সেই দুধ স্বয়ং কুমারী মেরির।

বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী রাজা বহিষ্কার করার পর আশ্রয়হীন জোসেফ এবং মেরি আশ্রয় নিয়েছিলেন এই গুহাতে। তখন নাকি আশেপাশের গুহাগুলির মতোই এই তিনটি গুহার রঙ ছিল লাল। কিন্তু প্রথম রাতেই কুমারী মেরির স্তন থেকে এক ফোঁটা দুধ গড়িয়ে পড়ে গুহার মেঝেতে। আর তখনই গুহাটির রং বদলে যায়। লাল রঙের গুহা হয়ে যায় ধবধবে সাদা। আর কুমারী মেরির শরীরে একটু একটু করে দেখা দিতে থাকে সন্তান সম্ভাবনার লক্ষণ। 

আজও এই বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে আছেন বহু মানুষ। কানাডা, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, এমনকি ভারতবর্ষ থেকেও মানুষ ভিড় করেন এই ‘চ্যাপেল অফ দি মিল্ক গ্রোটো’-তে। আর আশ্চর্যের বিষয়, তাঁরা প্রত্যেকেই কিন্তু খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী নন। ইহুদি, ইসলাম, হিন্দুরাও ভিড় করেন এখানে। তবে এই নিয়ে অনেক সময়েই চিকিৎসকরা বিরক্ত হয়ে ওঠেন। শরীরে চুনাপাথর গেলে নানা ধরণের রোগ সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি মায়ের শরীর থেকে গর্ভস্থ ভ্রূণের শরীরে চুনাপাথর চলে যাওয়াও অসম্ভব নয়। কিন্তু মানুষের বিশ্বাস কবেই বা এইসব যুক্তিতর্কের বেড়াজাল মেনেছে?

এক সময় পাথরে রঙ সম্বন্ধে কোনো পরিষ্কার ধারণাই ছিল না। চারিদিকে লাল রঙের গুহার মধ্যে হঠাৎ তিনটি গুহা সাদা কেন, এই প্রশ্নের উত্তর জানতেন না কেউই। আর সেই কারণেই জন্ম নিয়েছে উপকথার। আর কালক্রমে সেই উপকথা বদলে গিয়েছে ধর্মবিশ্বাসে। তবে সাদা পাথরের দেয়ালের মধ্যে মেরির মাতৃমূর্তি আর কোলে শিশু যীশুর ছবি আঁকা প্রার্থনাগৃহটি সত্যিই এক মনোরম জায়গা। আর কিছু না হোক, এমন পরিবেশে জীবনের সমস্ত অবসাদ ভুলে যাওয়া যায়।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
যিশুর প্রতীক হিসেবেই আবির্ভাব ক্রিসমাস ট্রি-র, তারায় মিশে বেথলেহেমের স্মৃতিও