দরিদ্র চা-বিক্রেতার মেয়ে থেকে বায়ুসেনার পাইলট, মধ্যপ্রদেশের কন্যার স্বপ্নপূরণের গল্প

নিজের মনে স্বপ্ন পুষতে কে না ভালবাসে। কিন্তু সবার কি হয়ে ওঠা হয় ইচ্ছেপূরণ? কারণ, স্বপ্নজয়ের পথ যে চিরকালই দুর্গম। তবে দাঁত চেপে লড়ে গেলে যে আকাশ হাতে মুঠোয় আসতে পারে, তারই প্রমাণ দিলেন এক তরুণী। দীর্ঘ পরিশ্রম, অধ্যাবসায় এবং নিষ্ঠার মধ্যে দিয়েই তিনি জয় করলেন ইচ্ছেকে। ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সে স্বপ্নের উড়ানকে স্পর্শ করলেন মধ্যপ্রদেশের বছর চব্বিশের আঁচল গঙ্গোয়াল।

একটা লম্বা রানওয়ে। সেখানে গতিবেগ বাড়িয়ে ক্রমশ ছুটে চলা। তারপর সুযোগ আসে উড়ানের। তবে ভাসতে পারার আগের এই পর্যায় শুনতে সহজ হলেও বাস্তবে তা কতটা কঠিন বোঝা যায় আঁচলের গল্পে। ২০১৩ সাল, জুন মাস। আজ থেকে ঠিক বছর সাতেক আগে তখন বন্যায় ভাসছে কেদারনাথ। প্রকৃতির কাছে ঋজু হয়েছে সভ্যতা। চারিদিকে শুধু হাহাকার। আর তার মধ্যেই বীরবিক্রমে লড়ে যাচ্ছেন ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের সৈন্যরা। উদ্ধার করছেন দুর্গতদের, পৌঁছে দিচ্ছেন ত্রাণ। সেদিন দেশের সাধারণ মানুষের জন্য বাড়িয়ে দেওয়া বায়ুসেনার সাহায্যের হাত মুগ্ধ করেছিল স্কুল পড়ুয়া আঁচলকে। মানসচক্ষে নিজেকে আঁচল দেখেছিল বায়ুসেনার উর্দিতে। আর তারপর থেকেই শুরু হয়েছিল লম্বা একটা রানওয়ে পেরিয়ে শরীর ভাসানোর প্রস্তুতি।

মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত নিমুচ জেলার বাসিন্দা আঁচল গঙ্গোয়াল। ভোপাল থেকে আরো ৪০০ কিলোমিটার দূরের প্রান্তিক একটি অঞ্চল। বাবা সামান্য চা-বিক্রেতা। বাস-স্ট্যান্ডের ছোট্ট দোকান ঘিরে সেখানে সারাদিন ঘুরে বেড়ায় দারিদ্র্য। সেই অর্থাভাবই হয়ে উঠল আঁচলের প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বী। আর আঁচলের স্বপ্নের দ্বিতীয় হার্ডল এল তাঁর নিজের পরিবারের পক্ষ থেকেই। সায় ছিল না তাঁর বাবা-মায়ের। যেখানে স্কুলের বেতন দিতেই নাভিশ্বাস ওঠে তাঁদের, সেখানে এমন একটা স্বপ্নপূরণের ভার বহন করা যে সোনার পাথরবাটি। তবে এসবের পরেও মেধাবী আঁচল কখনো বিচ্যুত হয়নি নিজের স্বপ্নপূরণের দৌড় থেকে। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে শুরু হয় কলেজের জীবন। তাঁর মাঝেই চলতে থাকে বায়ুসেনার পরীক্ষার প্রস্তুতি। বইয়ের সঙ্গে নিজের শরীরকেও আগামী কঠিন পরিস্থিতির জন্য তৈরি করে নিয়েছিলেন দক্ষ বাসকেটবল খেলোয়াড় আঁচল। পুরো লড়াইয়ে তাঁর পাশে ছিলেন আত্মীয়-পরিজনরা। সাধ্যমত বাড়িয়েছিলেন আর্থিক সাহায্যের হাত। 

প্রথমবার পরীক্ষায় এল না খুশির খবর। দ্বিতীয়বারও না। তবে হতোদ্যম হলেন না আঁচল। টানা পাঁচ বারের পর ষষ্ঠ পরীক্ষায় নিজের জায়গা পাকা করে নিলেন তিনি। তারপর পাইলট প্রশিক্ষণের চূড়ান্ত পরীক্ষাতেও সাফল্য। ডুন্ডিগল এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমি থেকে সম্প্রতি ফ্লাইং অফিসারের মুকুট জুটেছে আঁচলের মাথায়। দীর্ঘ সাত বছরের রানওয়ে পেরিয়ে এই লকডাউনেই শুরু হল সেই উড়ান।

আরও পড়ুন
যুদ্ধক্ষেত্রেও হারায়নি মানবিকতা, আমেরিকার বোমারু বিমানকে ‘জীবনদান’ জার্মান পাইলটের

তবে ভাইরাসের আবহে মধ্যপ্রদেশের প্রান্তিক জেলা থেকে খুশি হলেও, আক্ষেপের সুর মিশে আছে তাঁর বাবা-মায়ের গলায়। মিশে আছে, মেয়ের স্বপ্নপূরণ সচক্ষে দেখতে না পাওয়ার খেদ। চা-বিক্রেতার বদলে সুরেশ গঙ্গোয়ালের পরিচয় এখন ‘এয়ারফোর্স পাইলটের গর্বিত বাবা’ হিসাবেই। সত্যিই তো গর্বের, কারণ মোহনা সিং, আভানি অচতুর্বেদি কিংবা ভাওয়ানা কান্থের সঙ্গেই ভারতীয় বায়ুসেনার মহিলা পাইলট হিসাবে উচ্চারিত তাঁর মেয়ের নাম। সে গর্ব উড়বে ভারতীয় আকাশে। যার উড়ানে জড়িয়ে থাকবে তেরঙার ভরসা এবং আশ্বাসবাণী...

আরও পড়ুন
তিনটি দেশের হয়ে লড়েছেন যুদ্ধে, ৮০ বছরে প্রয়াত বাঙালি পাইলট সইফুল আজম

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ভারতীয় নৌসেনার প্রথম মহিলা পাইলটের দায়িত্বে লেফটেন্যান্ট শিবাঙ্গী