ভারতে থেকেও 'বিচ্ছিন্ন', চা বাগানের জন্য আলাদা টাইমজোন, কোথায়?

১৯০৬ সাল। ভারতে প্রথমবারের জন্য প্রচলিত হয়েছিল ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইম বা ভারতীয় প্রমাণ সময়। গ্রিনউইচ-এর সময়ের সাপেক্ষে ঠিক সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা সময় এগিয়ে রেখে ভারতের এই প্রমাণ সময়ের পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছিল ঔপনিবেশিক শাসনকালে। ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যবর্তী অঞ্চল মির্জাপুরের স্থানীয় সময়ই হয়ে উঠেছিল গোটা দেশের প্রমাণ সময়। তবে তার আগে ভারতজুড়ে প্রচলিত ছিল একাধিক টাইম জোন। যার অন্যতম দুটি কেন্দ্র ছিল কলকাতা এবং মুম্বাই। স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে বাতিল হয়ে যায় এই দুটি প্রমাণ সময়ই। তবে বৈচিত্রতায় অভাব হয়নি কোনো। স্বীকৃতি না পেলেও, আইএসটি-র বাইরে ভারতে প্রচলিত রয়েছে আরও একটি প্রমাণ সময়।

‘চায়ে বাগান টাইম জোন’ বা ‘টি গার্ডেন টাইম জোন’ (Tea Garden Time Zone)। হ্যাঁ, চা-বাগানের শ্রমিকদের জন্যই এই বিশেষ প্রমাণ সময় প্রচলিত রয়েছে পূর্ব ভারতের রাজ্য আসামে (Assam)। অবশ্য তা নিয়ে বিতর্কেরও অবকাশ নেই কোনো। কিন্তু এই পৃথক প্রমাণ সময় তৈরির কারণ কী? 

পূর্বের অরুণাচল থেকে পশ্চিমের গুজরাট— সবমিলিয়ে প্রস্থের দিক থেকে ভারতের বিস্তার প্রায় ২৯৩৩ কিলোমিটার। হিসেব অনুযায়ী দেখতে গেলে, প্রতি ১৫ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশের পরিবর্তনে এক ঘণ্টার ব্যবধান তৈরি হয় স্থানীয় সময়ে। সেদিক থেকে ভারতের দুই প্রান্তের মধ্যে স্থানীয় সময়ের ব্যবধান প্রায় দু’ঘণ্টার কাছাকাছি। অথচ, গোটা ভারত জুড়েই প্রচলিত একটি মাত্র প্রমাণ সময়। স্থানীয় সময়ের এই ব্যবধানই আসামের চা শ্রমিকদের অন্যতম সমস্যার কারণ। 

ভারতের প্রমাণ সময় এবং আসামের স্থানীয় সময়ের মধ্যে তফাৎ প্রায় ১ ঘণ্টার। কাজেই পশ্চিম কিংবা মধ্যভারতের থেকে প্রায় ১ ঘণ্টা আগে সূর্যোদয় হয় আসামে। অথচ, ভারতীয় সময় অনুযায়ী সেখানে প্রশাসনিক কাজ শুরু হওয়ায় সন্ধে হয়ে যাওয়ার পরেও কাজ চালিয়ে যেতে হয় কর্মীদের। আর চা বাগানের শ্রমিকরা? বিকালের পর চা বাগানে কাজ করা একপ্রকার অসম্ভবই হয়ে ওঠে তাঁদের কাছে। প্রথমত পাহাড়ি ঢালে প্রতি পদক্ষেপেই লুকিয়ে থাকে বিপদ। সন্ধে হওয়ার বেশ খানিকটা আগেই অন্ধকারে ডুবে যায় চা বাগান। তাছাড়া বন্যপ্রাণীর আতঙ্ক তো রয়েছেই। তাই বাধ্য হয়েই ভারতীয় প্রমাণ সময়ের থেকে ঘণ্টা খানেক আগেই কাজ শুরু করেন আসামের চা বাগানের শ্রমিকরা। সেই মতো নিজস্ব প্রমাণ সময়ও রয়েছে আসামে। 

আরও পড়ুন
অস্তিত্ব নেই সময়ের! পদার্থবিদ্যার নতুন তত্ত্বের ইঙ্গিত সেদিকেই

এই স্থানীয় প্রমাণ সময়ের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টাও কম হয়নি। আসামের চলচ্চিত্র নির্মাতা জাহ্নু বড়ুয়া দীর্ঘ দু’দশক ধরে নানাভাবে ‘চায়ে বাগান টাইম জোন’-এর বিষয়টি তুলে এনেছেন তাঁর সৃষ্টিতে। তাছাড়া আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন আসামের চা শ্রমিকরা। যদিও ভারতীয় সংবিধানের ‘এক জাতি এক সময়’ বক্তব্যের নিরিখে শেষ পর্যন্ত গুয়াহাটি হাইকোর্ট খারিজ করে দেয় প্রমাণ সময় সংশোধনের আবেদন। তবে তাতে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি আসামের পার্বত্য উপত্যকায়। আজও নিজের তৈরি সময় মেনেই কাজে যান চা-বাগানের শ্রমিকরা। আজও চলছে তাঁদের স্বীকৃতি আদায়ের লড়াই…

আরও পড়ুন
সময়ের স্রোত বয় বিপরীতে, অস্তিত্ব রয়েছে অদ্ভুত যমজ ব্রহ্মাণ্ডের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কলকাতা শহরের নিজস্ব টাইম জোন, প্রচলন ছিল স্বাধীনতার পরেও!

Latest News See More