সর্বসাকুল্যে আর মাত্র ৩০ বছর। তারপরই পুরোপুরি মরুভূমিতে পরিণত হবে সেরাডো। ব্রাজিল তো বটেই, গোটা বিশ্বের অন্যতম বায়ো-হটস্পট হিসাবে গণ্য করা হয় এই বনভূমিকে। ব্যপ্তি কিংবা পরিধি আমাজনের তুলনায় কম হলেও, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় অন্যতম ভূমিকা নেয় এই বনভূমি। তবে ক্রমশ মানুষের কার্যকলাপে দ্রুত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে সেরাডো।
সম্প্রতি ব্রাজিলের ১২ জন শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী একটি বিস্তারিত গবেষণা চালান সেরাডো’র প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ওপরে। সেখানেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ১৯৯০ সালের পর থেকে দ্রুত আয়তন কমেছে সেরাডোর। সেইসঙ্গে বিগত তিন দশকে সেরাডোর দৈনিক গড় উচ্চতা বেড়েছে প্রায় ২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০৫০ সালের মধ্যে যা আরও ৪ ডিগ্রি বাড়বে বলেই আশঙ্কা তাঁদের। সম্প্রতি ‘গ্লোবাল চেঞ্জ বায়োলজি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র।
কিন্তু হঠাৎ এই উষ্ণতা-বৃদ্ধির কারণ কী? আসলে সেরাডোকে বনভূমি বললেও, আমাজনের মতো ক্রান্তীয় অরণ্যের তুলনায় খানিকটা আলাদা সেরাডো। বিক্ষিপ্তভাবে বৃক্ষের উপস্থিতি লক্ষ করা গেলেও, ২০ লক্ষ বর্গকিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই অঞ্চল আদতে তৃণভূমি। মূলত ছড়িয়ে থাকা এই বৃক্ষগুলিই নিয়ন্ত্রণ করত সেরাডোর উষ্ণতা। ভূগর্ভস্থ জল শোষণ করে তা জলীয় বাষ্পের আকারে পরিবেশে ছাড়ত এই বৃক্ষগুলিই। বর্তমানে কৃষি এবং ডেয়ারি শিল্পের চাহিদার কারণে সম্প্রসারিত হচ্ছে চারণভূমি এবং কৃষিজমির পরিধি। তার ফলে ক্রমশ কাটা পড়ছে এই গাছগুলি। শুষ্ক হয়ে উঠছে সেরাডোর আবহাওয়া।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, শুধু উষ্ণতা বৃদ্ধিই নয়, জলবায়ুর এই পরিবর্তনের ফলে তলানিতে এসে ঠেকেছে শিশিরপাতের পরিমাণও। যা মৌমাছি, মাকড়শার মতো পরাগসংযোগকারী প্রাণীদের অস্তিত্বকেও ঠেলে দিচ্ছে বিপদের দিকে। কারণ শুষ্ক সাভানায় এই প্রাণীগুলির কাছে একমাত্র জলের উৎস ছিল বৃষ্টি এবং শিশিরপাত।
আরও পড়ুন
দক্ষিণ এশিয়ায় মুছে যাচ্ছে পার্বত্য বনভূমির অস্তিত্ব, আতঙ্কিত বিজ্ঞানীরা
সেরাডোয় সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজারেরও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণী রয়েছে, যাদের দেখা মেলে না পৃথিবীর অন্যকোনো অংশে। আশঙ্কার মুখে তাদের অস্তিত্বও। আগামীতে সেরাডো মরুভূমিতে পরিণত হলে অধিকাংশ প্রজাতিগুলিই চিরকালের মতো বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিজ্ঞানীরা। আর প্রশাসন? এই ঘটনা নিয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারো। আমাজনের পাশাপাশি সেরাডোতেও বিগত এক বছরে ঘটে গেছে প্রায় ৬৯টি অগ্নিকাণ্ড। তা নিয়ে ন্যূনতম আলোচনাটুকু হয়নি প্রশাসনিক স্তরে। নেওয়া হয়নি কোনো সরকারি পদক্ষেপও।
আরও পড়ুন
নেদারল্যান্ডসের আয়তনের সমান বনভূমি হ্রাস ২০২০-তে, জানাচ্ছে সমীক্ষা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ফেসবুক মার্কেটপ্লেসেই বিক্রি হচ্ছে আমাজনের বনভূমি, প্রশাসনের নাকের ডগায় বে-আইনি ব্যবসা