পেট্রোল-ডিজেল তো বটেই, সাম্প্রতিক সময়ে লাগামহীনভাবেই বেড়ে চলেছে কেরোসিন কিংবা এলপিজি-র দামও। এবার সেইসঙ্গে এক ধাক্কায় মূল্যবৃদ্ধি হতে চলেছে ওষুধেরও। ইতিমধ্যেই ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে এই ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছে কেন্দ্র।
পেনকিলার, অ্যান্টিবায়োটিক, কার্ডিয়াক, প্রতিরোধক— সমস্ত ওষুধেরই পাইকিরি মূল্য বৃদ্ধি পাবে আগামী এপ্রিল মাস থেকে। গত শুক্রবার এই বিষয়ে ঘোষণা করে ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা জাতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং। উল্লেখ্য, প্রতিবছরই অল্প-বিস্তর পরিবর্তিত হয় হোলসেল প্রাইস ইন্ডেক্স বা ডব্লুপিআই। চলতি বছরেও সরকার কর্তৃক তার বদল হয়েছে ০.৫ শতাংশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওষুধের দামে ১৫-২০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পাবে বলেই জানাচ্ছে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি।
এক ধাক্কায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের এই মূল্যবৃদ্ধির দরুন আরও একবার প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু হঠাৎ এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ কী? সে ব্যাপারে অবশ্য চিনকেই দায়ী করছেন কেন্দ্র এবং বিভিন্ন ওষুধ নির্মাতারা। অ্যান্টিবায়োটিক হোক কিংবা পেনকিলার— সমস্ত ওষুধ তৈরির কাঁচামালই ভারত আমদানি করে চিনের থেকে। নির্ভরতা প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ। আর সেই কারণেই হঠাৎ এই মূল্যবৃদ্ধি বলে জানিয়েছে প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি। পাশাপাশি পাল্লা দিয়েই বেড়েছে প্যাকেজিং থেকে শিপিং-এর খরচও। সব মিলিয়ে যার কোপ পড়তে চলেছে সাধারণ মানুষের ওপর।
তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে অন্য জায়গায়। মহামারী চলাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশেষভাবে জোর দিয়েছিলেন স্বনির্ভরতার ওপরে। ওষুধের কাঁচামাল যাতে ভারতেই প্রস্তুত করা যায় তার জন্য ঘোষণা করেছিলেন বিশেষ ভাতারও। উল্লেখ করা হয়েছিল, এই উদ্দেশ্য সফল হলে, আমদানির ওপর নির্ভরতা অনেকটাই কমিয়ে ফেলবে ভারত। তবে সে পরিকল্পনা যে লাল ফিতে ফাঁসে জড়িয়ে রয়েছে, তা পরিষ্কার হয়ে গেল মূল্যবৃদ্ধি থেকেই।
অন্যদিকে গত ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে যে চিনে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই কোনো। কোভিড পরিস্থিতির জন্য অধিকাংশ কারখানা বন্ধ থাকায় বেড়েছিল দাম। কিন্তু বর্তমানে খুলে গেছে প্রায় সমস্ত ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাই। পুরোদমেই চলছে উৎপাদন। কিন্তু তার পরেও এই লাগামহীন দাম বৃদ্ধির পিছনে যুক্তি কী অথবা তাতে চিনের প্রভাবই বা কতটা, সে নিয়েই থেকে যাচ্ছে বিস্তর বিতর্কের জায়গা…
Powered by Froala Editor