সমকামী বিবাহের মামলার শুনানির থেকেও আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। সেই মামলাগুলির আগে নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। ‘সমকামী বিবাহের শংসাপত্র না পেলে কেউ মারা যাচ্ছে না।’ গতকাল দিল্লি হাইকোর্টে এমনই সাফাই গাইল কেন্দ্র। গত বছর থেকেই দিল্লি হাইকোর্টে চলে আসছে এই মামলা। শুরুতেই নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্র। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানিয়েছিলেন, সমকামী বিবাহ ভারতের সংস্কৃতির পরিপন্থী। তবে সে হলফনামার পুনর্বিবেচনার জন্য পুনরায় শুনানির দিন ধার্য করেছিল আদালত। এবার আরও একবার যেন এই ইস্যুটিকেই এড়িয়ে গেল কেন্দ্র।
গত বছর অভিজিৎ আইয়ার-সহ তিন ব্যক্তি দ্বারস্থ হয়েছিলেন দিল্লি আদালতে। দাবি ছিল সমলিঙ্গ বিবাহকে হিন্দু বিবাহ আইন, বিশেষ বিবাহ আইন, এবং বিদেশি বিবাহ আইনের আওতায় আনা হোক। জমা দেওয়া হয়েছিল পিটিশন। আর তার ভিত্তিতেই আইনি বৈধতা নিয়ে কেন্দ্রকে নোটিশ জারি করেছিল আদালত। বিগত নভেম্বর এবং জানুয়ারি মাসের শুনানিতে কোনো উত্তর দেয়নি কেন্দ্র।
গতকাল বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তুষার মেহতা জানান, এই মুহূর্তে জরুরি ও আসন্ন বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ করছে সরকার। আইনজীবীদেরও সেদিকেই নজর দেওয়া উচিত। তবে সরকারের এই বক্তব্যকে ঘিরেই ঘনিয়ে উঠেছে বিতর্ক। আবেদনকারীর প্রতিনিধি হিসাবে সিনিয়র অ্যাডভোকেট সৌরভ কিরপাল সরকারের এই মন্তব্যকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ হিসাবেই চিহ্নিত করেছেন। পাশাপাশি তাঁর আবেদন, সরকারকে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে শুনানির গুরুত্ব নির্ধারণ করার অধিকার দিতে হবে আদালতকেই।
“সরকারের এই বক্তব্যের মধ্যে একটা অতিসরলীকরণ বা ট্রিভিয়ালাইজেশন আছে। কারণ, এ কথা সত্যি যে বিয়ের স্বীকৃতি না পাওয়ায় বহু মানুষ মারা যাচ্ছে”, জানালেন এলজিবিটি আন্দোলনকারী তথা ‘প্রান্তকথা’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়। বাস্তব পরিস্থিতির কথা ফুটে উঠল তাঁর কথা, “সমলিঙ্গ যুগলরা তাঁদের পার্টনারকে এই কোভিড পরিস্থিতিতে মেডিক্যাল ইনসোরেন্সে ইনক্লুড করতে পারছেন না। হেটেরোসেক্সুয়াল ম্যারেজের ক্ষেত্রে যে অসুবিধাটা নেই। এমনকি কেন্দ্র সরকারও ঘোষণা করেছে যারা সরকারি কর্মচারী, তাঁদের পরিবারও মেডিক্যাল কভারেজ পাবে। কিন্তু এই পরিবার কথাটিই হেটেরোসেক্সুয়াল বিবাহের ওপর দাঁড়িয়ে। কোভিডে এমনিই বহু মানুষ মারা যাচ্ছে। সমলিঙ্গ যুগলদের ক্ষেত্রে এটা মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। একটা সমীক্ষা করলেই এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে সরকারের কাছে।”
আরও পড়ুন
লক্ষ্য বৈষম্যহীন রায়, মনোবিদের কাছে সমকামিতার পাঠ নিচ্ছেন হাইকোর্টের বিচারপতি
পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে বর্তমানে ৭ কোটি মানুষ রয়েছে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের। একদিকে যেমন তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছে নাগরিক অধিকার থেকে, তেমনই মহামারী পরিস্থিতিতে আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের লড়াই। অথচ, বাস্তবের এই ছবিটাই যেন দৃশ্যমান হচ্ছে না কেন্দ্রের কাছে। উল্টে আবেদনের স্থগিতাদেশ চেয়ে পাল্টা মামলা দায়ের করেছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। এই ঘটনারই তীব্র নিন্দা করছেন সরকারের বিপক্ষে থাকা আইনজীবীরা। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী জুলাই মাসের ৬ তারিখে। এখন দেখার তীব্র সমালোচনার মধ্যেও কতদিন এই বিষয়টিকে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে সরকার…
আরও পড়ুন
জাতীয় পুরস্কার পেলেন দেশের প্রথম স্বঘোষিত সমকামী অভিনেতা বেঞ্জামিন
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
সমপ্রেমের সিনেমা, সমকামী অভিনেতাকে নিয়েই ‘বাজিমাত’ হলিউডের