মাস্ক আর বাধ্যতামূলক নয় যুক্তরাষ্ট্রে; নতুন কোনো বিপদের হাতছানি?

বিগত ১ বছর ধরেই করোনাভাইরাসের হটস্পট ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে ৩ কোটি ৩৬ লক্ষেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এখনও পর্যন্ত। প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৬ লক্ষ। তবে আক্রান্তের গ্রাফ এখন নিম্নমুখী। দৈনিক সংক্রমণ নেমে এসেছে ৩৫ হাজারেরও নিচে। ক্রমশ কোভিডজয়ের পথেই হাঁটছে আমেরিকা। এমতাবস্থায় বড়ো সিদ্ধান্ত নিল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। এবার থেকে আর মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক নয় যুক্তরাষ্ট্রে। সম্প্রতি এমনটাই ঘোষণা করল মার্কিন স্বাস্থ্য সংস্থা।

গতকাল সিডিসি’র এই বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা করার পরই, তাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এদিন ঘোষণার পরে হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে মাস্ক ছাড়াই দেখা যায় বাইডেন এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে। সাংবাদিক সম্মেলনেও অংশ নেন তাঁরা। 

গত বছরের শুরু থেকেই মাস্ক পরা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। এমনকি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও অন্যতম ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল মাস্ক পরিধান। মাস্ক না পরা নিয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্পকে বিঁধেছিলেন বাইডেন। নির্বাচনে জিতে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও মাস্ক পরাকে বাধ্যতামূলক করেছিলেন তিনি। এমনকি সিডিসি-র বিজ্ঞপ্তি বেরনোর আগে পর্যন্তও মাস্ক পরেই জনসমক্ষে হাজিরা দিয়েছেন বাইডেন। গত শুক্রবারেও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনকে ন্যাশনাল মিউজিয়ামে দেখা গিয়েছিল মাস্ক পরেই। বাইডেনের বক্তব্য ছিল, নাগরিকরা অনুসরণ করেন রাষ্ট্রনেতাদেরই। সুতরাং, প্রকাশ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে তাঁদেরও। 

কিন্তু মহামারীতে বিশ্বের সবথেকে বিপর্যস্ত দেশ হঠাৎ কেন এমন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিল? পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে সেই কারণ। বিগত ১১৪ দিনে মোট ২৫ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দিতে সক্ষম হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৩৬ শতাংশ নাগরিকদের ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়ে গেছে দুটি ডোজই। ৬ কোটি মানুষ পেয়েছেন একটি করে ডোজ। আশা করা হচ্ছে জুলাইয়ের মধ্যেই ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে ফেলবে যুক্তরাষ্ট্র।

আরও পড়ুন
মজবুত করতে হবে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, করোনা-মোকাবিলায় নিদান চিকিৎসকদের

আমেরিকার এই ভ্যাকসিনেশন ড্রাইভ যে ভীষণরকমভাবেই সফল, তা সংক্রমণের নিম্নমুখী গ্রাফ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৯টিতেই উল্লেখযোগ্যভাবে আয়ত্তে এসেছে সংক্রমণ। একই সঙ্গে মডার্না, ফাইজার এবং জনসনের ভ্যাকসিনে অনুমোদন প্রদানই ত্বরাণ্বিত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যাকসিনেশন ড্রাইভকে। 

আরও পড়ুন
লোহার ফুসফুস নিয়েই ৬৮ বছর, করোনায় সন্ত্রস্ত আলেকজান্ডার

যদিও মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হলেও সতর্কতা জারি রেখেছে সিডিসি। জানানো হয়েছে যাঁদের এখনও ভ্যাকসিনেশন হয়নি অথবা একটি ডোজ নেওয়া হয়েছে— তাঁদের মাস্ক পরতে হবে প্রকাশ্যে বেরোলে। সিডিসি’র এই সিদ্ধান্ত উস্কে দিচ্ছে বিতর্ককেও। কোনো নাগরিকের ভ্যাকসিন নেওয়া হয়েছে কিনা তা কীভাবে চিহ্নিত করবে প্রশাসন? সে ব্যাপারে অবশ্য স্পষ্ট কিছু উল্লেখ করেনি মার্কিন প্রশাসন। আর সেই জায়গাটাতেই থেকে যাচ্ছে ধোঁয়াশা।

আরও পড়ুন
সংক্রমণ রুখতে যথেষ্ট নয় ৬ ফুটের দূরত্ববিধি, নতুন নির্দেশিকা জারি মার্কিন প্রশাসনের

যুক্তরাষ্ট্রের এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই নতুন করে ডেকে আনবে না তো বিপদকে? এমনটা ভেবে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকদের একাংশ। দ্বিতীয় তরঙ্গকে ঠেকানো গেলেও, অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে আঘাত আনতে পারে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ। তাতে সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েই যাচ্ছে ৬৪ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে। এখন দেখার সেই তরঙ্গ আসার আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১০০ শতাংশ ভ্যাকসিনেশনে সফল হয় কিনা…

Powered by Froala Editor

Latest News See More