আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগের কথা। প্রযুক্তি তো দূরের কথা, মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে সেসময় মানুষ শুধু বুঝত গুহাকে। প্রকৃতি এবং প্রাণীকুলের সঙ্গে সংঘাত করেই বেঁচে থাকত হত তাকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আদিম মানবের হাতে আঁকা শৈল্পিক চিত্র আজও বাকরুদ্ধ করে দেয় আমাদের। জন্ম দেয় বিস্ময়ের। প্রাগৈতিহাসিক সেই শিলাচিত্রই (Cave Paintings) ধীরে ধীরে ক্ষয় পাচ্ছে ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনে (Climate Change)। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল সাম্প্রতিক গবেষণায়।
ইন্দোনেশিয়ার বেশ কিছু গুহার প্রাচীন প্রস্তরচিত্র এবং শিলার বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দিচ্ছে এমনই। অস্ট্রেলিয়াতেও ১১টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে গবেষণা চালিয়েছিলেন পৃথক একটি গবেষক দল। তাঁদের রিপোর্টেও উঠে আসছে এই একই তথ্য। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং কীভাবে প্রভাব বিস্তার করছে হাজার হাজার বছর আগে আঁকা এই ছবিগুলির ওপর?
গবেষকরা জানাচ্ছেন, প্রস্তরচিত্রের ক্ষয়ীভবনের জন্য দায়ী অন্যতম দুটি উপাদান হল লবণ এবং স্ফটিক। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে যত গড় তাপমাত্রা বাড়ছে পৃথিবীর, ততই মাটি শুকিয়ে জন্ম নিচ্ছে ধূলিকণা। বাতাসে মিশছে খনিজ লবণ। বায়ুবাহিত হয়ে এই লবণই গিয়ে জমা হচ্ছে প্রাচীন গুহাগুলির দেওয়ালে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খনিজ লবণের এই আস্তরণও সংকুচিত-প্রসারিত হয়। ফলে, তাদের সঙ্গেই খসে পড়ে গুহার পাথরের ছোটো ছোটো টুকরো।
তাছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ, তাপমাত্রারও দ্রুত বদল হয়ে চলেছে ক্রমাগত। তাপমাত্রা এবং আর্দ্র বায়ুর প্রভাবে গুহাচিত্রের মূল উপাদান অর্থাৎ প্রাকৃতিক রংগুলিও ক্ষয় পাচ্ছে দ্রুত। জলীয় বাষ্পের সঙ্গে বিক্রিয়ায় বদলে যাচ্ছে গুহাচিত্রের আসল রং-ও। সালফাইড যৌগের সংস্পর্শে এসে ঠিক যেভাবে কালো হয়ে যায় তৈলচিত্র, এও অনেকটা তেমনই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীন গুহাচিত্রের ঔজ্জ্বল্য এবং স্পষ্টতা কমে আসাই স্বাভাবিক। তবে গবেষকরা জানাচ্ছেন জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে কয়েকগুণ দ্রুত হারে চলছে এই প্রক্রিয়া। তবে শুধু গুহাচিত্রের ক্ষেত্রেই নয় পরিবেশের এই স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে ক্রমশ ক্ষয় পাচ্ছে পাথরের তৈরি নানান সৌধও। যা যথেষ্ট আশঙ্কারই বটে। এভাবেই চলতে থাকলে আর কয়েক দশকের মধ্যেই হয়তো মুছে যেতে পারে মানুষের পূর্বপুরুষদের শেষ চিহ্নটুকুও। গবেষকরা চেষ্টা চালাচ্ছেন ঠিকই, তবে এখনও পর্যন্ত এই ধরনের প্রাচীন শিল্পগুলি সংরক্ষণ করার সুনির্দিষ্ট কোনো পথের সন্ধান দিতে পারেনি বিজ্ঞান…
আরও পড়ুন
মেরু প্রদেশে তাপপ্রবাহ, জলবায়ু পরিবর্তনের চরম পর্যায়ে পৃথিবী
Powered by Froala Editor