ঝড়ের গ্রহ বৃহস্পতি। কয়েকশ বছর আগে থেকেই অতি সাধারণ দূরবীক্ষণ যন্ত্রেও ধরা পড়েছে তার মধ্যে একাধিক স্থায়ী ঘূর্ণিঝড়ের অস্তিত্ব। তার একটির আয়তন তো আমাদের পৃথিবীর সমান। কিন্তু ঠিক কী কারণে বৃহস্পতির বুকে এমন বিধ্বংসী ঝড়ের দাপট দেখা যায়, এই প্রশ্নের উত্তর জানতেন না কেউই। অথচ প্রায় কাকতালীয় ভাবেই গবেষকদের হাতে এসে পড়ল বেশ কিছু সূত্র। আর এর ফলে বৃহস্পতির ঝড়ের রহস্য পরিষ্কার হতে আর হয়তো বেশি দেরি নেই।
গত মাসেই বৃহস্পতির মেঘের স্তর থেকে বেশ কিছু ছবি পাঠিয়েছিল নাসার স্পেস স্যাটেলাইট জুনো। এখনও একবছরের বেশি সময় বৃহস্পতির কক্ষপথে অবস্থান করবে জুনো। আর মেঘের মধ্যে তৈরি হওয়া বেতার সংকেতের রেকর্ড পাঠাতে থাকবে বিজ্ঞানীদের কাছে। ইতিমধ্যে সেই সংকেত থেকে দেখা গিয়েছে, বৃহস্পতির ঝড় বৃষ্টির তাণ্ডব বেশিরভাগটাই দুই মেরুর দিকে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে আবহাওয়া অনেকটাই শান্ত। অর্থাৎ পৃথিবীর ঠিক বিপরীত। এখানে সূর্যরশ্মির প্রভাবে নিরক্ষীয় অঞ্চলেই প্রতিদিন ঝড় বৃষ্টি লেগে থাকে।
অন্যদিকে নাসার ৩০ বছর বয়সের স্পেস টেলিস্কোপ হাবল তার লেন্সে বৃহস্পতির বেশ কিছু আলোকচিত্র ধরতে পেরেছে। বলা বাহুল্য এই ছবিগুলিতে সেই গ্রহের ঘূর্ণিঝড়গুলির চেহারা অনেকটাই স্পষ্ট। তবে সেসব ছবি সাধারণ আলোকচিত্র। অর্থাৎ দৃশ্যমান আলোয় তোলা ছবি। তবে হাবল এই ছবি তোলার ঘণ্টাখানেক আগেই জেমিনি অবজারভেটরির ইনফ্রা-রেড ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেই একই ঝড়ের ছবি। তবে এগুলো ইনফ্রা-রেড রশ্মির সাহায্যে তোলায় তার চেহারা অন্যরকম।
হাবলের ছবিগুলিতে ঝড়ের যে অংশগুলি গাঢ়, অর্থাৎ মেঘের অস্তিত্ব বেশি; জেমিনির ছবিতে সেই অংশগুলিই অধিক উজ্জ্বল। আর এই দুই ছবির তুলনামূলক আলোচনার ফলে বৃহস্পতির ঝড়ের মধ্যে শক্তির কম্পন বোঝা সম্ভব হচ্ছে। আর এমন সূত্র কি বিজ্ঞানীরা হাতছাড়া করেন? ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে গবেষণা। এখনও অবধি বৃহস্পতিতে কোনো ক্লাইমেট স্যাটেলাইট পাঠানো হয়নি। তবে এইভাবে তিনদিক থেকে পর্যবেক্ষণের ফলে সেই কাজটাই সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। এখনও অবধি তাঁদের অনুমান, বৃহস্পতির দ্রুত পরিক্রমণ গতির কারণে যে শক্তির সঞ্চয় হয়, তার বণ্টনের কাজটাই করে সেখানকার শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়গুলি। তবে জুনোর আগামী একবছরের পর্যবেক্ষণ থেকে এই বিষয়টা আরও গভীরে বোঝা যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।