যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে এখনও খোলা ‘ক্যাট ক্যাফে’, দায়িত্বে অনড় ইউক্রেনিয়ান নাগরিক

‘পরিত্যক্ত শহরের দেশ’। ইউরোপে এমনই পরিচয় ইউক্রেনের। কেননা গোটা দেশজুড়েই সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে সোভিয়েত যুগের অজস্র ঘোস্ট টাউন। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে সেই সংখ্যাটা আবারও বাড়তে শুরু করেছে নতুন করে। সেই তালিকার সাম্প্রতিকতম সংযোজন লভিভ শহর। পশ্চিম ইউক্রেনের (Ukraine) এই শহরটিও রীতিমতো ফাঁকা হয়ে গেছে রাশিয়ার-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনেই। তবে এই ধূধূ মৃত্যুপুরীতেও শেষ বাসিন্দা হিসাবে টিকে রয়েছেন কয়েকজন ক্যাফে চালক। কিন্তু এই শুনশান শহরে তাঁদের ক্রেতা কে? কেন বা এই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন না তাঁরা মৃত্যুভয়ে?

দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর, দায়িত্ব। আর প্রথমটির, মার্জার। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন বিড়াল। কথায় আছে, ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’। ইউক্রেনের পরিস্থিতি বর্তমানে অনেকটা তেমনই। প্রাণ বাঁচাতে শহর থেকে পাততাড়ি গুটিয়েছেন বহু মানুষ। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়া ফেলে গেছেন প্রায় সবকিছুই। এমনকি মায়া ত্যাগ করতে হয়েছে প্রিয় পোষ্যদেরও। কিন্তু তারা কি অনাহারেই মরবে মালিকের অভাবে? স্বেচ্ছায় তাদের পরিচর্যা, প্রতিপালন এবং খাদ্য যোগানের দায়িত্ব নিয়েছে লভিভের ‘ক্যাট ক্যাফে’ (Cat Cafe)। 

নাম থেকেই বেশ বোঝা যায় এই দোকানের চরিত্র। কলকাতায় যেমন রয়েছে বেশ কিছু পেট ফ্রেন্ডলি ক্যাফে, যেখানে ক্রেতারা তাঁদের প্রিয় পোষ্যকে সঙ্গে নিয়েই প্রবেশ করতে পারেন, ইউক্রেনের এই দোকানটিও অনেকটা তেমনই। আজ থেকে প্রায় দেড় দশক আগেই চালু হয়েছিল লভিভের এই পেট-ফ্রেন্ডলি ক্যাফে। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে ক্রেতা না থাকলেও, অবলা পোষ্যদের পরিচর্যার দায়িত্বে অনড় রয়েছে ক্যাফে কর্তৃপক্ষ। লোকসানের ভার মাথায় নিয়েও পালন করে চলেছেন পোষ্যদের প্রতি দায়িত্ব। সব মিলিয়ে প্রায় ২০টি বিড়ালের আস্তানা এখন এই ক্যাফেতে। 

সম্প্রতি, সিএনএন-এর সাংবাদিক ইরিন বার্নেটের সৌজন্যে সামনে এসেছে ইউক্রেনের এই ‘মানবিক’ ছবি। বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও সম্প্রচারের জন্য সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থান করছেন ইরিন। সেভাবেই ঘুরতে ঘুরতে হাজির হওয়া লভিভের এই ক্যাফেতে। সাধারণত, খাবারের জন্য সীমান্ত থেকে প্রায় একশো কিলোমিটার দূরে পাড়ি দিতে হয় তাঁকে। শুনশান লভিভে এসে তাই এমন একটি ক্যাফে খোলা দেখে বেশ অবাকই হয়েছিলেন ইরিন। তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলে উঠে আসে এই অবাক করা মানবিকতার গল্প। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? উত্তর জানা নেই। তবে প্রাণ গেলেও পোষ্যদের ছেড়ে যেতে নারাজ ক্যাফের মালিক ও গুটিকয় কর্মচারী…

আরও পড়ুন
'জন্মভূমি ইউক্রেন, আমায় মার্জনা করো'

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পোষ্য পাচারের জেরে সংকটে ভারতের সবচেয়ে ‘সুন্দর’ কচ্ছপ