কিছুদিন হল জাঁকিয়ে শীত পড়েছে কলকাতায়। আর হিমালয়ের ওপারে উষ্ণতা অনেকটাই কম। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেকটা নিচে। আর এরকম অবস্থায় বরফ নিয়ে খেলা রীতিমতো আতঙ্কের। তবে ওই যে, কল্পনার থেকেও বাস্তব অনেক বেশি রহস্যময়। এই শীতেই বরফের উৎসবে মেতে ওঠেন চিনের হিলংজিয়াং রাজ্যের মানুষ। হার্বিন শহরকে ঘিরে উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে এবছরও। প্রতি বছরের মতো এবছরও ৫ জানুয়ারি শুরু হবে মেলা। চলবে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত।
হার্বিন শহরের পারদ বলছে উষ্ণতা হিমাঙ্কের নিচে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নদীর জলও সারাদিন বরফ হয়ে আছে। আর সেই বরফের নদী থেকেই টুকরো টুকরো করে বরফ তুলে নিচ্ছেন শ্রমিকরা। শিল্পীরা অপেক্ষা করছেন নদীর ধারে। নদী থেকে তুলে আনা বরফের খণ্ড জুড়ে জুড়ে তাঁরা তৈরি করছেন অদ্ভুত সব স্থাপত্য। কোথাও মধ্যযুগের দুর্গের আদলে প্রাসাদ। কোথাও আবার বরফ দিয়েই তৈরি আস্ত রেস্টুরেন্ট। কিছুদিনের মধ্যেই সেখানে রান্না শুরু করবেন রাঁধুনিরা। ক্রেতারা ভিড় করে বসবেন বরফের তৈরি চেয়ার-টেবিলে। এমনকি প্যাগোডা, বিরাট বিরাট মূর্তি; সবই তৈরি হবে নদী থেকে তুলে আনা বরফ দিয়েই।
‘হার্বিন ইন্টারন্যাশানাল আইস অ্যান্ড স্নো স্কাল্পচার ফেস্টিভাল’-এর সূচনা ১৯৬৩ সালে। তখন সদ্য গঠিত কমিউনিস্ট সরকারের নেতৃত্বে চলছে সাংস্কৃতিক বিল্পবের কর্মসূচি। আর তার অংশ হিসাবেই শুরু হয় এই উৎসব। উদ্দেশ্য একটাই। শীতের সময় যেন সরীসৃপের মতো মানুষও শীতঘুমে চলে না যায়। অবশ্য সরকারি উদ্যোগে বছর সাতেকের বেশি চলেনি উৎসব। কিন্তু হার্বিন শহরের মানুষ নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে আবার শুরু করলেন উৎসব। আর ১৯৮১ সালে তৈরি হল উৎসবের নিজস্ব কমিটি। তখন থেকে এখনও প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই অভিনব উৎসব।
পরিসংখ্যান বলছে প্রতি বছর এই সময়ে ১ কোটির বেশি পর্যটক ভিড় করেন হার্বিন শহরে। এমনকি ফেব্রুয়ারি মাস পেরিয়ে গেলেও মেলা শেষ হয় না। যতদিন আবার তাপমাত্রা হিমাঙ্কের উপরে উঠে বরফ গলে যাচ্ছে, ততদিন চলে বিকিকিনি। এবার অবশ্য করোনা অতিমারীর কারণে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ। ফলে পর্যটকের আগমন অনেকটাই কমবে। কিন্তু তার জন্য কি উৎসব বন্ধ করা যায়? এই উৎসব যে মানুষের সারা বছরের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে।
Powered by Froala Editor