কার্বন নির্গমন এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন বর্তমান সময়ে গোটা বিশ্বের কাছেই একটি অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েক দশক আগে, কার্বন নির্গমনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে একটি বিশেষ প্রস্তাব সামনে রেখেছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা— কার্বন অফসেট। আদতে যা পরিবেশ দূষণের ক্ষতিপূরণ। কার্বন অফসেটের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থেই পরিবেশে নতুন প্রাণসঞ্চার করার প্রকল্প করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেই প্রকল্পে সাড়া দিচ্ছে না সাধারণ মানুষ। এক কথায় বলা যেতে পারে, ডাহা ব্যর্থ হয়েছে কার্বন অফসেটের (Carbon Offset) পরিকল্পনা। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল সাম্প্রতিক সমীক্ষায়।
এই সমীক্ষার আলোচনায় যাওয়ার আগে কার্বন অফসেট সম্পর্কে কয়েকটা কথা বলে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে প্রতি বছর গড়ে ৪৪ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড মিশছে বাতাসে। যা ১৯৫০ সালে কার্বন নির্গমনের প্রায় ৫ গুণ। তাছাড়া মিথেন, কার্বন মোনোঅক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস তো আছেই। এই বিপুল পরিমাণ কার্বন নির্গমনের একটি বড়ো অংশের জন্য দায়ী শিল্পাঞ্চল। পাশাপাশি ১১ শতাংশের কার্বন নির্গমন হয় পর্যটন শিল্প থেকে। এর প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ কার্বন নির্গমনের কারণ বিমান পরিষেবা। শিল্পের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার পরিবেশ দূষণের জন্য আলাদা করে কর চাপালেও, সেই ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে।
আর সেই কারণেই, অন্যান্য ক্ষেত্র তো বটেই গবেষকরা বিশেষভাবে কার্বন অফসেট প্রকল্প জারি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন বিমান পরিষেবায়। জানিয়েছিলেন কার্বন ফুটপ্রিন্ট বৃদ্ধি করার দায় নিতে হবে যাত্রীদের। দিতে হবে বাড়তি মূল্য। অরণ্যায়ন এবং রাসায়নিক পদ্ধতিতে কার্বন ট্র্যাপিং-এর মতো খাতে খরচ করা হবে সেই অর্থ। এমিরেটস, ইউনাইটেড, ডেলটা, ব্রিটিশ এয়ারওয়েসের মতো বেশ কিছু আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন সংস্থা চালুও করেছিল এই প্রকল্প। যাতায়াত পিছু কার্বন অফসেটের জন্য সর্বোচ্চ ১৩ ডলার ধার্য করেছিল সংস্থাগুলি। অবশ্য তাতে বাধ্যবাধকতা ছিল না কোনো। অর্থাৎ, গ্রাহক চাইলে কার্বন অফসেটের এই মূল্য এড়িয়ে যেতে পারতেন স্বেচ্ছায়। আর এই জায়গাতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে গোটা প্রকল্পটি।
সম্প্রতি, এই বিষয়ে বিশ্বব্যাপী একটি সমীক্ষা চালায় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। আর তাতেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কেবলমাত্র ৮ শতাংশ যাত্রী এখনও পর্যন্ত কার্বন অফসেটের ধার্য করা অর্থ প্রদান করেছেন স্বেচ্ছায়। এর আগে কার্বন অফসেটের খাতে ব্যয় না করলেও, এই অর্থ দিতে ইচ্ছুক আরও ২৭ শতাংশ মানুষ। তবে বাকি ৬৫ শতাংশ যাত্রী মুখ ফিরিয়েছেন প্রকল্প থেকে।
আরও পড়ুন
পরিকল্পিতভাবে কীটনাশক ছড়িয়ে আমাজন ধ্বংস, অভিযোগ পরিবেশকর্মীদের
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বিমান ভাড়ার তুলনায় কার্বন অফসেটের দাম সামান্যই। কিন্তু তা সত্ত্বেও এমন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া রীতিমতো অবাক করেছে গবেষকদের। তবে কি এই পদ্ধতিতে পরিবেশের হাল ফেরানো সম্ভব নয়? বিশেষজ্ঞদের অভিমত, কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণে এখনও অন্যতম কার্যকারী প্রকল্প কার্বন অফসেট। তবে তা বাধ্যতামূলক না করলে ফলপ্রসূ হবে না কোনোদিনই। এবং তাকে বাস্তবায়িত করতে গেলে এই প্রকল্প চালু করতে হবে বিশ্বের সমস্ত এয়ারলাইন সংস্থাকেই। কিন্তু ব্যবসায়িক স্বার্থের বাইরে গিয়ে আদৌ কি এই পদক্ষেপ গ্রহণ করবে অর্থশালী বেসরকারি এয়ারলাইন সংস্থাগুলি? থেকে যাচ্ছে সেই প্রশ্নই…
আরও পড়ুন
বরফ-পাহাড়ে নৃত্যানুষ্ঠান, পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ সিডনিতে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমাতে নয়া প্রযুক্তি, জড়িয়ে দুই বাঙালি বিজ্ঞানী