গত নভেম্বরেই বিপুল সমারোহে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কপ-২৬ সম্মেলন। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শিল্পপতি, পরিবেশকর্মীরাও। উদ্দেশ্য একটাই, কার্বন নিঃসরণের (Carbon Emission) মাত্রা কমাতে হবে। পূর্ববর্তী প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও যে পৌঁছানো যায়নি, সে-কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন প্রত্যেকেই। কিন্তু এবারের গ্লাসগো সম্মেলনের চুক্তিও কি সফল হবে? সম্মেলনের শেষেই এই প্রশ্ন তুলেছিলেন গ্রেটা থুনবার্গ থেকে শুরু করে পরিবেশকর্মীদের অনেকে। আর এবার সেই আশঙ্কাকেই উস্কে দিচ্ছে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা গার্ডিয়ানের সদ্য প্রকাশিত একটি রিপোর্ট। শুধুমাত্র লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনীহাই নয়, বাণিজ্যিক মুনাফার লোভে পৃথিবীকে আরও বড়ো বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাদী দেশগুলি। এমনটাই দাবি করেছেন তাঁরা।
বিগত কয়েক মাস ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের (Fuel Oil) দাম ঊর্ধ্বমুখী। আর এই পরিস্থিতিকেই মুনাফালাভে কাজে লাগাতে চাইছেন শিল্পপতিরা। বলা বাহুল্য, এর ফলে সামগ্রিকভাবে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমিয়ে আনা তো দূরস্থান, বরং আরও বেশি করে চাহিদা বাড়ানোর দিকেই নজর দিচ্ছেন তাঁরা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি উৎসের দিক থেকে নজর সরে গিয়েছে অনেকটাই। ফলাফল কী হতে চলেছে, তা সকলের কাছেই পরিষ্কার। কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমার বদলে বরং বেশ খানিকটা বেড়ে যাবে ২০৩০ সালের মধ্যেই। গার্ডিয়ানের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ প্রায় দেড়গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
এর পাশাপাশিই চলছে জীবাশ্ম জ্বালানি জমিয়ে রেখে কৃত্রিম চাহিদা তৈরির প্রক্রিয়া। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জীবাশ্ম জ্বালানির জোগান কমেছে, এ-কথা সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছে। তবে গার্ডিয়ানের রিপোর্ট বলছে, জীবাশ্ম জ্বালানির যে পরিমাণ সংকট দেখা দিয়েছে, তা ইউক্রেনের মোট বার্ষিক উৎপাদনের চেয়েও বেশি। অতএব শুধুমাত্র যুদ্ধ কখনোই দায়ী হতে পারে না। অন্যদিকে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা আরব আমিরশাহীর মতো দেশগুলিতে খনিজ তেল প্রক্রিয়াকরণ চলছে। কিন্তু তা বাজারে আসছে না। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তেলের দাম আরও বাড়াতে চাইছেন ব্যবসায়ীরা। এর ফলে যে বিপুল পরিমাণ কার্বন জমা হচ্ছে, তাকে একটি 'কার্বন বোমা'র সঙ্গেই তুলনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। মাটির নিচে অপরিশোধিত খনিজ তেল থেকে বিষ্ফোরণের সম্ভাবনা অনেক কম। কিন্তু পরিশোধনের পর একবার তাতে বিষ্ফোরণ ঘটে গেলে গোটা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
অবশ্য খনিজ তেলকে নিয়ে এই ব্যবসা নতুন নয়। বিগত ৩০ বছর ধরে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থার কাছে সবচেয়ে অর্থকরী ব্যবসায় পরিণত হয়েছে খনিজ তেলের ব্যবসা। এক্সন মোবিল, সেল বিপি, সেভ্রনের মতো কোম্পানিগুলি গত ৩ দশকে অন্তত ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘরে তুলেছে খনিজ তেলের ব্যবসা থেকে। এই মুনাফার বাজারে কি তাহলে শেষ পর্যন্ত পরিবেশের প্রশ্ন পিছু হটতে বাধ্য হবে? আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
আরও পড়ুন
ভারতে প্রতিবছর ৭ লক্ষ মৃত্যুর নেপথ্যে জলবায়ু, জানাচ্ছে সমীক্ষা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের জের, মুছে যাচ্ছে প্রাচীন গুহাচিত্র