কথায় কথায় অনেকেই বলে থাকেন, ‘আহা, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম!’ এখনকার এই কলকাতায় গাড়ি-ঘোড়া, কংক্রিট আর ইঁদুর দৌড়ের ভিড়ে ঠিক করে শ্বাস নিতে পারেন না অনেকেই। আগের দিনগুলো ভালোই ছিল, কী করতে যে এত কিছু হল। কিন্তু আগের দিনগুলোয় সত্যিই কিছুই হত না? শহরে এখনকার অন্যতম সমস্যা হল পথ দুর্ঘটনা। মানুষ বাড়ছে, গাড়িও বাড়ছে; সেই সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর খবরও। আগে কি এরকম কিছুই হত না?
কলকাতায় এখন যেরকম রাস্তাঘাট হয়েছে, আজ থেকে ২০০ বছর আগে এমন কিছু ছিল না। তার দরকারও পড়েনি। কারণ জনসংখ্যা, নগর জীবনের চাপ সেই অর্থে এখনকার তুলনায় কমই ছিল। গাড়ি-ঘোড়াও কম চলত। একদিকে ছিল শহরের আদি বাসিন্দারা, অন্যদিকে ছিল ব্রিটিশরা। তখনও কি শহর কলকাতায় পথ দুর্ঘটনা হত না? তখনকার দিনের সংবাদপত্র কিন্তু এমনটা বলছে না। দুর্ঘটনা তখনও ঘটত, মানুষ মারাও যেত।
নজর রাখা যাক ১৮১৮ সালের সমাচার দর্পণের প্রতিবেদনের দিকে। দিনটি ছিল ১ নভেম্বর। নিজের ঘোড়াগাড়িতে করে এক ব্যক্তি কলকাতার রাস্তায় হাওয়া খেতে বেরিয়েছিলেন। ব্যক্তিটি ছাড়াও ওই গাড়িতে ছিলেন এক সারথি বা চালক, এবং একজন সহিস। জোড়াসাঁকোর কাছে গাড়িটি পৌঁছতেই ঘটল অঘটন। গাড়ির সামনে চলে এলেন এক বৃদ্ধা। সহিস, চালক সবাই চিৎকার করেছিলেন বটে, কিন্তু কোনো লাভ দেয়নি। বৃদ্ধা কানে শুনতে পেতেন না; বধির ছিলেন। এড়ানো গেল না দুর্ঘটনা। গাড়ি ওঁর ওপর দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান বৃদ্ধা। পুলিশ পরে সারথি আর সহিসকে গ্রেফতার করে।
আরেকটি ঘটনা তিন বছর পরের। সাল ১৮২১, অকুস্থল কলকাতার বিখ্যাত গড়ের মাঠ। সেই সময় সাহেবদের সান্ধ্যভ্রমণের জায়গা ছিল। পরিবার, প্রিয়জনকে নিয়ে, ঘোড়ার গাড়িতে চেপে হাওয়া খেতে আসতেন সেখানে। এপ্রিলের গরমে সেখানে এসেছিল দুটি গাড়ি। একটিতে ছিলেন দুই সাহেব, অন্যটিতে এক সাহেব ও তাঁর স্ত্রী। ঠিকই হচ্ছিল সব; হঠাৎই দুই গাড়ির চাকায় বিষম ধাক্কা লাগে। গাড়ির বাইরে ছিটকে পড়েন যাত্রীরা। আশেপাশের সমস্ত মানুষরা ছুটে আসেন। ভাগ্যবশত, কারোরই চোট গুরুতর ছিল না।
তবে এইগুলো বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। এরকম দুর্ঘটনা ২০০ বছর আগেও হত। এখন শুধু তার রূপ আর সংখ্যা বদলেছে। প্রযুক্তিও এগিয়েছে; তাই দুর্ঘটনার ভয়াবহতাও বেড়েছে। আগের দিন সত্যিই হয়তো ভালোই ছিল।
Powered by Froala Editor