লকডাউনে কাজ হারিয়েছে সকলেই। বন্ধ রোজগারও। না, পরিযায়ী শ্রমিক নয়। ওরা সবাই বিরাট চতুষ্পদ প্রাণী, হাতি। সম্প্রতি রাজস্থানের জয়পুর শহরে হাতিদের দুর্দশার দৃশ্য চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে প্রাণী সুরক্ষা কর্মীদের কপালে। এর জন্য সরকারের হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন অনেকে।
সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে সমস্ত বাণিজ্যিক ক্ষেত্রই বিপর্যস্ত। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন শিল্প। এমনকি আনলক পর্যায়ে অনেক ব্যবসা শুরু হয়ে গেলেও পর্যটন শিল্প এখনও ধুঁকছে। আর এদেশের এবং বিদেশি পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্যস্থল রাজস্থানের অবস্থাও একই। তার প্রভাব শুধু মানুষের উপরেই নয়, হাতিদের উপরেও পড়েছে।
জয়পুর ঘুরতে গেলে, বিশেষত আমের দুর্গের আশেপাশে ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের প্রথম পছন্দ হাতির পিঠ। যদিও রাজস্থান হাতির আবাসস্থল নয়। এদের নিয়ে আসা হয় বিহার ও অন্যান্য রাজ্য থেকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বে-আইনিভাবে নিয়ে আসা হয় তাদের। আর তারপর বন্য জীবন ছেড়ে দিন কাটে বন্দিদশায়। তবে করোনা পরিস্থিতির মতো খারাপ অবস্থায় কোনোদিন পড়তে হয়নি।
ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান অ্যানিম্যাল প্রোটেকশন অর্গানাইজেশন থেকে জানানো হয়েছে, গত ৬ মাসে ৪টি হাতির মৃত্যু ঘটেছে জয়পুর শহরে। আর এদের প্রত্যেকেরই হজমের সমস্যা দেখা গিয়েছে। সেইসঙ্গে হাঁটাচলার অভাবে অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে। সাধারণত সমস্ত পোষ্য হাতির শরীরেই এধরনের সমস্যা দেখা যায়। জঙ্গলে খাবারের সন্ধানে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয় হাতিদের। কিন্তু বন্দিদশায় তা সম্ভব হয় না। অবশ্য জয়পুরের হাতিরা পর্যটকদের পিঠে নিয়ে অনেকটা হাঁটার সুযোগ পায়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
এছাড়া খাবারের বৈচিত্র্যের অভাবও শারীরিক অসুস্থতার অন্যতম কারণ। বন্দি হাতিদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একইধরণের খাবার দেওয়া হয়। মূলত তালপাতা। ফলে একই খাবার খেতে খেতে পাকস্থলিতে সমস্যা দেখা দেয়। ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষায় অবশ্য দেখা গিয়েছে প্রতি ১০ জন হাতির মধ্যে ১ জন যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত। এর কারণও তাদের অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন।
ফিয়াপোর তরফ থেকে রাজস্থানের মুখ্য সচিব এবং মুখ্য প্রাণী সুরক্ষা আধিকারিকের কাছেও আবেদন জানানো হয়েছে, তাঁরা যেন এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন। যে অমানবিক পরিস্থিতিতে তাদের থাকতে হচ্ছে, সেখান থেক মুক্তি না দিলে হয়তো বাঁচানো যাবে না কাউকেই। আর করোনা পরিস্থিতির ব্যবসায়িক টানাপোড়েন কেড়ে নেবে আরও অনেক প্রাণ। যদিও এখনও পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন
বন্দিদশায় দিন কাটায় ২৭০০ হাতি, সুরক্ষার জন্য তৈরি হবে পরিচয়পত্র
Powered by Froala Editor