আমেরিকা থেকে প্রায় ৩,২০০ কিমি দূরে, উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ হল হাওয়াই। এখনকার অনেকের কাছে অন্যতম টুরিস্ট ডেসটিনেশন হলেও, এককালে তেমন ছিল না। বাইরের সভ্যতা থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্নই ছিল হাওয়াইয়ানরা। ১৭৭৮ সালের ১৮ জানুয়ারি পুরো পরিস্থিতিটা বদলে গেল। হাওয়াইয়ের তীরে ভিড়ল দুটি বিশাল জাহাজ। সেখান থেকে সাদা চামড়ার কিছু মানুষ নেমে এল। নেমে এলেন ব্রিটিশ অভিযাত্রী ক্যাপ্টেন জেমস কুক। এই প্রথম কোনও ইউরোপীয়’র পা পড়ল হাওয়াই দ্বীপে। এর আগে এমন দৃশ্য দেখেনি ওখানকার মানুষগুলো।
বিশ্বের এতদিন যাবৎ তাবড় অভিযাত্রীদের তালিকায় ক্যাপ্টেন জেমস কুকের নাম ওপরের দিকেই থাকবে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড আবিষ্কার তো বটেই, পুরো পৃথিবীর কাছে হাওয়াই দ্বীপের রাস্তা খুলে দিয়েছিলেন তিনি। প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে তিনি পা দিয়েছিলেন সেখানে। হাওয়াইয়ানদের পক্ষে এর ফল অবশ্য সুখকর হয়নি। পরবর্তীকালে এই পথেই বিদেশিরা এখানে প্রবেশ করতে থাকে। জেমস কুককেও স্থানীয় রাজাকে অপহরণের চেষ্টার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছিল এই দ্বীপে। তাঁর দেহও ফেরত যায়নি। সেসব বাদ দিয়েও, জেমস কুকের এই যাত্রাগুলি আরও একটি কারণে বিখ্যাত থেকে গেছে।
আগেকার দিনে সমুদ্র যাত্রা এতটা সুগম ছিল না। পরিকাঠামো কম তো ছিলই, তার সঙ্গে ছিল প্রবল দুর্যোগ। হানা বসাত বিভিন্ন রোগ। তার মধ্যে অন্যতম ছিল স্কার্ভি। মাড়ি ফুলে রক্তক্ষরণ হত নাবিকদের। আর এইভাবেই অনেকে অসুস্থ হয়ে মারাও যেত। ক্যাপ্টেন জেমস কুকের যাত্রাও এইভাবে পণ্ড হতে পারত। কিন্তু তাঁর কাছে ছিল এক আশ্চর্য ওষুধ - লেবু। সমুদ্র যাত্রার সময় জাহাজের অনেকটা অংশ বোঝাই হয়ে থাকত এই লেবু। আর তাতেই স্কার্ভি জয় করেন তিনি। একপ্রকার নিঃশব্দেই ভিটামিন-সি’র প্রয়োগ শুরু করেছিলেন জেমস কুক। স্কার্ভি রোগের কারণ তো আজ আমরা সবাই জানি। কিন্তু সেই সময় শুধু সাধারণ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে এই চিকিৎসা তাঁকে আজও মহান করে রেখেছে। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও ঠিক, হাওয়াইয়ে ঔপনিবেশিকতার শুরুটাও তাঁর হাত ধরেই হয়েছিল।