ভারতবর্ষের চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অসংখ্য মন্দির। শুদুই ইতিহাস বুকে নিয়ে নয়, আজও বহু ভক্তের ভিড় লেগে থাকে সেখানে। আর মন্দির মানেই পূজা-অর্চনার দায়িত্বে থাকবেন একজন পুরোহিত। পুরোহিত বললেই অবশ্য আমাদের চোখের সামনে যে পরিচয়টা ভেসে আসে, সেটা একজন বর্ণহিন্দুর পরিচয়। তাঁর পদবিতে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাবে যে তিনি ব্রাহ্মণ বংশে জন্মেছেন। কিন্তু যদি এই পুরোহিত হন একজন আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি? সাংবিধানিক ভাষায় যাঁদের বলা হয় তফসিলি উপজাতি! ভাবতেই হোঁচট লাগে। কিন্তু এমনটাই সত্যি হল কেরালার ত্রিবাঙ্কুরে। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম পুরোহিত হিসাবে নিযুক্ত হলেন তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের একজন মানুষ।
কেরালার বিভিন্ন মন্দিরগুলিকে একত্রে রাজ্য সরকারের অধীনে এনে চারটি মন্দির পরিচালনা সংস্থা তৈরি হয়েছিল আগেই। আর এই সংস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম বড়ো সংস্থা ত্রিবাঙ্কুর দেবস্বম বোর্ড। ২০১৭ সালে এই বোর্ড বিভিন্ন মন্দিরের সহকারী পুরোহিত নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আবেদনকারীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। আর তার ভিত্তিতেই নিয়োগ করা হয়। আর তখনই প্রচলিত ধারণা ভেঙে সংরক্ষণের পথে হাঁটে বোর্ড। তফসিলি জাতি ও উপজাতির জন্য নির্দিষ্ট আসন সংরক্ষণ করা হয়। যদিও বোর্ডের কর্তাদের কথায়, সামাজিক বিধিনিষেধের জন্য প্রথমে অব্রাহ্মণ জনগোষ্ঠী থেকে যথেষ্ট আবেদন জমা পড়েনি। আর তাই যথেষ্ট প্রচার চালিয়ে আবারও পরীক্ষা নিতে হয়। তবে তফসিলি উপজাতির জন্য ৪টি আসন সংরক্ষিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত একজনকেই বেছে নেওয়া হয়। তবে ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে এও এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বৈকি!
শুধুই ত্রিবাঙ্কুর দেবস্বম বোর্ড নয়, একই পথে হেঁটেছে অন্যান্য মন্দির পরিচালনা বোর্ডগুলিও। গত সাড়ে চার বছরে কেরালায় মোট ১৩৩ জন অব্রাহ্মণ পুরোহিত নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই তফসিলি জাতির। আর বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তালিকায় দেখা গেল, আরও ১৯ জন অব্রাহ্মণ পুরোহিত নিযুক্ত হলেন। তার মধ্যেই ১৮ জন তফসিলি জাতির এবং একজন তফসিলি উপজাতির। একসময় ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রভাবে যাঁরা মন্দিরে প্রবেশাধিকার পেতেন না, তাঁরাই সামলাচ্ছেন পূজার্চনার দায়িত্ব। ভারতের বুকে এমন দৃষ্টান্ত সত্যিই অবাক করে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
সংকটের দিনগুলিতে একজোট পুরোহিত ও ইমামরা, খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন দুঃস্থদের কাছে