বয়স দুশো বছরেরও বেশি। তৈরি পাথর কেটে। এহেন অন্নপূর্ণা দেবীর প্রাচীন মূর্তি এবার ফিরতে চলেছে ভারতে। সুদূর কানাডার রেজিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। প্রায় একশো বছর আগে এই দেশ থেকেই সেখানে স্থানান্তরিত হয়েছিল ঐতিহাসিক মূর্তিটি। মূর্তির উৎসের ব্যাপারে সম্প্রতি জানতে পেরেই তা ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় কানাডার অন্যতম ওই বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৩৬ সাল থেকে রেজিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টগ্যালারিতে ছিল মূর্তিটি। গত আগস্ট মাসে সেখানে একটি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলেন ভারতীয় শিল্পী দিব্য মেহরা। মূর্তিটি দেখে তিনিই প্রথম চিহ্নিত করেন, সেটি একটি ভারতীয় ভাস্কর্য। মূর্তিটির হাতে ধরে থাকা একটি পাত্র দেখে দাবি করেন সেটি দেবী অন্নপূর্ণার। এই ধরণের একাধিক মূর্তি লক্ষ্য করা যায় বারাণসীতে। পরে ভারতীয় স্থাপত্যবিদ ডঃ সিদ্ধার্থ সাহ মূর্তিটির চিহ্নিতকরণ করেন। বলাইবাহুল্য, নির্ভুল ছিল দিব্য মেহরার সন্দেহ।
ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়েই উঠে আসে আরেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ১৯১৩ সাল নাগাদ ভারতভ্রমণে এসেছিলেন কানাডিয়ান স্কলার নর্ম্যান ম্যাকেঞ্জি। তখন ভারতে চলছে ঔপনিবেশিক শাসন। মূর্তিটি দেখার পর তা সংগ্রহের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাঁর এই সংগ্রহস্পৃহার কথা জানতে পেরেই এক ভারতীয়ই তাঁকে বিক্রি করেন এই মূর্তি। না বললেও চলে, কার্যত তিনি চুরি করেই এনেছিলেন সেটিকে।
ইতিহাস ও তার সম্পর্কিত তথ্য জানতে পেরেই তা ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগী হয় কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি থমাস চেস সম্প্রতি যোগাযোগ করেন ওটাওয়ার ভারতীয় হাই কমিশনের আধিকারিক অজয় বাসরিয়ার সঙ্গে। প্রস্তুত করা হয় প্রশাসনিক কাগজপত্রও। খুব শীঘ্রই আবার ভারতে পাড়ি দিতে চলেছে অষ্টাদশ শতকে তৈরি এই দেবীমূর্তি। ভারতীয় স্থাপত্য-ভাস্কর্যের দলিল হয়ে থাকা এই মূর্তির সংরক্ষণের প্রয়োজন তাঁর আদিবাসস্থান ভারতেই। এমনটাই জানিয়েছেন উপাচার্য থমাস চেস। ঔপনিবেশিক শাসনকালের ক্ষতিপূরণ না হলেও, অন্তত উত্তরাধিকারীদের কাছে মূর্তিটি ফিরিয়ে দেওয়া উপযুক্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন তিনি...
Powered by Froala Editor