‘উট কি কাঁটা বেছে খায়?’ ফেলুদার সোনার কেল্লা অভিযানে লালমোহন বাবুর এই আইকনিক প্রশ্নটা বোধহয় আমাদের প্রত্যেকের মনে আছে। যাদের নিয়ে এই প্রশ্নটা করা, তারা কোনও রক্তমাংসের মানুষ নয়। তারা হল মরুভূমির জাহাজ, উট। আজ সেই উটের সংখ্যাই ক্রমশ কমছে ভারতে।
২০ তম লাইভস্টক সেনসাস রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে উটের সংখ্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। তাঁদের সমীক্ষার হিসেবে, ’৯০-এর শুরুর দিকে যত উট ছিল, বর্তমানে তার ৭১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। ধীরে হলেও, তথ্যটা আশঙ্কাদায়ক। ভারতে প্রধানত রাজস্থানেই দেখা যায় উট। তাছাড়াও গুজরাট, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশেও দেখা মেলে এদের। এই প্রত্যেকটা জায়গায় কমেছে উটের সংখ্যা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হরিয়ানার। যেখানে সাত বছরে প্রায় ৭২ শতাংশ উট নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
কিন্তু কারণ কী? রাজস্থানে একটা সময় যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হত উট। বিভিন্ন সিনেমাতেও আমরা সেটা দেখেছি। কিন্তু এখন তার চল কমেছে অনেকটা। আধুনিক প্রযুক্তির গাড়ি এসে যাওয়ায় কমেছে উটে চড়ার রেওয়াজ। শুধু পর্যটক এলেই সেই উপলক্ষটা আসে। এছাড়াও, উটকে চাষের কাজেও লাগানো হত একটা সময়। ট্রাক্টর আসায় সেই জায়গাটাও শেষ হয়েছে। সবথেকে বড় কারণ অবশ্য অন্য। উটের বিচরণ ক্ষেত্র দিনকে দিন কমে যাচ্ছে। সেই জায়গায় গজিয়ে উঠছে রিয়েল এস্টেট, অন্যান্য প্রকল্প। এছাড়াও সরকারের আইনও কিছুটা দায়ী। রাজস্থান সরকার ২০১৪ সালে উটকে তাদের ‘স্টেট অ্যানিম্যাল’ হিসেবে ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে উটকে যাতে না মেরে ফেলা হয়, সেই আইন আনা হয়। এই আইন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে উট নিয়ে যাওয়াও বাতিল করে দেয় রাজস্থান সরকার। ফলে, আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ার জায়গা থাকছে না। একটা জায়গায় আটকা পড়ে আছে প্রাণীগুলো। উটের সংখ্যা এভাবে কমতে থাকলে, ভবিষ্যতে সমূহ বিপদ বলে মনে করছেন প্রাণীবিদরা।