প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই একটা আলাদা পৃথিবী থাকে। আর সেই পৃথিবীর গল্পই সযত্নে বয়ে নিয়ে বেড়ায় সে। গোপনে লালন করে তাকে। আমাদের আশেপাশে এমনই হাজার হাজার গল্প ঘুরে বেড়ায় বাসে, ট্রামে, রাস্তায়, স্টেশনে, কফিহাউসে। কখনো কথা হয় তাদের সঙ্গে, কখনো হয় না। আবার যে সহযাত্রীর সঙ্গেই দেদার আড্ডা জমল ধোনির ব্যাটিং নিয়ে, আপনার সঙ্গে মিলে গেল ক্রিকেটের স্বাদ— সে তাঁর জীবনে আসলে হয়তো একজন সঙ্গীতজ্ঞ, হয়তো চিত্রশিল্পী কিংবা অভিনেতা। স্টপেজ এসে যাওয়ায় আপনার আর স্রেফ পড়া হয়ে ওঠেনি সেই অজানা অধ্যায়। এমনই এক চলমান যাপনের গল্প পড়ে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নম্রতা দত্ত। অজান্তেই। যে গল্পের নাম সুশান্ত সিং রাজপুত।
বছর দুয়েক আগের ঘটনা। ফ্রান্সে ওই প্রবাসী গবেষকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল এক স্বল্পবয়সী ভারতীয় যুবকের। প্যারিস বিমানবন্দরের সেই আকস্মিক সাক্ষাতে উঠে এসেছিল পদার্থবিদ্যার কথা। কোয়ান্টাম মেকানিক্স, এক্স-রে, ক্রিস্টালোগ্রাফি, স্পেশ-টাইম কন্টিনিউয়াম। ইতস্ততভাবে তাঁদের বাক্যালাপের চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিল এসবই। নিজস্ব ভঙ্গীতে, চিন্তাধারায় পদার্থবিদ্যার সেইসব তত্ত্বের ব্যাখাও দিয়েছিলেন যুবকটি। মুগ্ধ করেছিলেন খোদ পদার্থবিজ্ঞানের একজন গবেষককে।
শুরুর দিকে গবেষক নম্রতা মনে করেছিলেন, হয়তো যুবকটি ফ্রান্সেরই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন পদার্থবিদ্যায়। তবে পরে ভেঙে গিয়েছিল সেই ধারণা। না! পেশা পদার্থবিদ্যায় গবেষণা নয়, অভিনয়। বিমানবন্দরে পরিচয় হওয়া সেই যুবকটি আসলে ছিলেন বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত। আদ্যপ্রান্ত বিজ্ঞানপ্রেমী, সর্বভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকায় সপ্তম স্থানাধিকারী, ফিজিক্স অলিম্পিয়াড-জয়ী এই যুবকটির অভিনয়-জীবনের কথা শুনে অবাক হয়েছিলেন নম্রতা। এমন একজন মেধাবী বিজ্ঞানপ্রেমী কীভাবে পড়াশোনা ছেড়ে অভিনয়ের জন্য এগিয়ে যেতে পারেন, বিস্মিত হয়েছিলেন এটা ভেবেই। মাত্র ঘণ্টা পাঁচেকের আলাপে নত হয়েছিলেন সেই একাগ্রতা এবং স্বপ্নপূরণের নেশার কাছে।
সুশান্ত সিং রাজপুত তাঁর কাছে সন্ধান করেছিলেন অভিনয়ের পাশাপাশি এই ভালবাসাটাকেও বাঁচিয়ে রাখার রাস্তার। জানতে চেয়েছিলেন, বৃত্তি বা অনিয়মিত ক্লাসের মাধ্যমে কীভাবে চালিয়ে যাওয়া যায় পদার্থবিজ্ঞানের পড়াশোনা। অভিনয়ের কথা জানার পর তাঁকে রুপোলি পর্দাতেই দেখতে বেশি আগ্রহী, জানিয়েছিলেন নম্রতা।
আরও পড়ুন
সুশান্ত সিং রাজপুতকে শেষ শ্রদ্ধা ফ্রান্সের ইন্টারন্যাশানাল স্পেস ইউনিভার্সিটি-র
গত ১৪ তারিখে সুশান্তের মৃত্যুসংবাদে স্তম্ভিত কেমব্রিজের এই পদার্থবিজ্ঞানী। ট্যুইটারে শোকপ্রকাশের সঙ্গেই তাঁর স্মৃতিচারণে উঠে আসে অজানা সেই সুশান্তের কথা। যিনি প্রায়শই হাতে কলমে বিজ্ঞান শেখার লোভে ছুটে যেতেন নাসা কিংবা ইউরোপের নামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাকেন্দ্রগুলিতে। আগ্রহবশত সুশান্ত নম্রতাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, যদি টাইম ট্রাভেল সম্ভব হয় তবে কী পেতে চান তিনি সমান্তরাল বিশ্বে? সম্পত্তি, গোছানো সংসার। মজা করেছিলেন নম্রতা। পাল্টা একই প্রশ্নে সুশান্তের উত্তরে অবাক হয়েছিলেন তিনি। সুশান্ত চেয়েছিলেন পদার্থবিদ্যার ছাত্র হতে।
আরও পড়ুন
সুশান্তের মৃত্যুশোকে বিহারে প্রয়াত তাঁর বৌদি, অসুস্থ সুশান্তের বাবাও
সুশান্ত সিং রাজপুতের ট্যুইটার বায়োতে লেখা ছিল ‘ফোটন ইন আ ডুয়াল স্লিট’। তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা। সুশান্ত নেই। রয়ে গেছে তাঁর ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট। রয়ে গেছে বায়োতে লেখা ছোট্ট সেই লাইনটুকু। তিনি নিজেও যে রহস্যের মতোই অভিনেতা এবং পদার্থবিদ দুই চরিত্রই লুকিয়ে রেখেছিলেন চিরকাল। আমরা প্রথমটার সন্ধান পেয়েছিলাম। পড়ে দেখার সুযোগ পাইনি লুকিয়ে থাকা আরেকটা গল্পের। স্ব-ইচ্ছেতেই ছুটি নিয়ে কোনো সমান্তরাল বিশ্বে যে গল্পের মধ্যে এখন হয়তো প্রবলভাবে মজে আছেন সুশান্ত সিং রাজপুত...
আরও পড়ুন
পড়ে রইল একগুচ্ছ ব্যতিক্রমী ইচ্ছে, ভ্যান গঘের ‘স্টারি নাইট’-এর মতোই ছিলেন সুশান্ত
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
‘বরাবর লড়াকু মানসিকতাই দেখেছি সুশান্তের মধ্যে’, বলছেন সহ-অভিনেতা ডঃ কৌশিক ঘোষ