দুর্বল ইন্টারনেট, তাও অনলাইন পরীক্ষা! আশঙ্কিত বাংলার প্রত্যন্ত এলাকার পড়ুয়ারা

একাধিক জটিলতাকে সঙ্গী করেই শুরু হতে চলেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল সেমিস্টারের পরীক্ষা। ১ অক্টোবর থেকে পরীক্ষা শুরু হবে পুরোপুরি ইন্টারনেটের উপর নির্ভর করেই। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড়ো একটি বিশ্ববিদ্যালয়, যার পড়ুয়াদের ঠিকানাও শহরাঞ্চল থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত প্রসারিত, সেখানে এই ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। এমনকি বিকল্প কোনো পদ্ধতি ছিল কিনা, সে প্রশ্নের উত্তরও খুঁজছেন অনেকে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে অনলাইন পরীক্ষার ক্ষেত্রেও সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে পড়ুয়াদের জন্য। লেখার জন্য ২ ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে এবং লেখা শেষ করে ১৫ মিনিটের মধ্যে উত্তরপত্র জমা দিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে। ডিজিট্যাল ইন্ডিয়ার পক্ষে এই ব্যবস্থা তেমন সমস্যা সৃষ্টি করার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবের চেহারা অন্য কথা বলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নামখানা নিবাসী এক ছাত্র জানান, “আমফান ঝড়ের পর আমাদের গ্রামে কাজ এগিয়েছে খুব ধীরে। কেবল ইন্টারনেট পরিষেবা এখনও চালু হয়নি। মোবাইলের কানেকশনও অনেক সময়েই চলে যাচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে কীভাবে পরীক্ষা দিতে পারব জানি না।” এমন দুঃশ্চিন্তা অনেক পড়ুয়াকেই ঘিরে ধরেছে। গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা অনেক জায়গাতেই খুব সহজে মেলে না।

বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যাপিকা সঞ্চারী গোস্বামী বলছেন, “এখানে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু করার ছিল না। ইউজিসি থেকে যা গাইডলাইন এসেছে, সেভাবেই পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। কিন্তু ইউজিসি হয়তো এটুকুই মাথায় রেখেছে যে এখন সবার হাতেই মোটামুটি স্মার্টফোন থাকে। কিন্তু তাতে ইন্টারনেটের কানেকশন কেমন থাকে সেটার খোঁজ রাখেনি তারা। তাছাড়া আমফানের পর এখনও শহরাঞ্চলেই ইন্টারনেট পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা তো বলাই বাহুল্য।” বিদ্যাসাগর কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তমোনাশ রায়ের কথায়, “ইন্টারনেট পরিষেবার কথা মাথায় রেখে আমরা শুধু পরীক্ষার সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু সেটুকুও মানা হয়নি।”

তবে শুধু যে ইন্টারনেট কানেকশনই একমাত্র সমস্যা, এমনটা নয়। অধ্যাপিকা গোস্বামীর কথায়, “কলেজ বন্ধ হওয়ার আগেই আমরা প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেইসব পড়ুয়াদের আবার নতুন করে পরীক্ষা দিতে হবে। তাছাড়া অনেক পড়ুয়াই জানিয়েছে, তড়িঘড়ি হোস্টেল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে তারা সামান্য কিছু বই নিয়েই বাড়ি ফিরে যায়। এখনও ট্রেন চলাচল শুরু না হওয়ায় তারা হোস্টেলে ফিরতে পারছে না। ফলে পড়াশোনাও ঠিকঠাক করতে পারছে না।” তবে এইসমস্ত জটিলতা মাথায় রেখে অন্যভাবে পরীক্ষা নেওয়া যেত কিনা, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে এর উদ্যোগ নীতিনির্ধারকরাই দিতে পারবেন। কিন্তু অসংখ্য পরীক্ষার্থীর জীবন এভাবে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়ার কি আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল? এত জটিলতা নিয়ে কি কোনো পড়ুয়ার শিখার মূল্যায়ন সম্ভব হতে পারে আদৌ? প্রশ্ন রইল পাঠকের কাছেই...

আরও পড়ুন
‘যোগ্যতাহীন অপদার্থ’, জাত নিয়ে আক্রমণের শিকার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বাড়িতে বসে, বই খুলেই পরীক্ষা; কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়া সিদ্ধান্ত ও কিছু সংশয়

More From Author See More