করোনার মোকাবিলা করা যেতে পারে কোন ওষুধে, তা এখনও জানা নেই আমাদের। আমেরিকা এবং আরও অনেক দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি, এটি কতটা কার্যকরী ভাইরাসের বিরুদ্ধে। জাপানের ল্যাবরেটরিতে তৈরি ওষুধও এখন মেডিক্যাল ট্রায়ালে। তাই বিকল্পের সন্ধান শুরু হয়েছিল অনেক দেশেই। আক্রান্তের রক্তরসে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি সংগ্রহ করে চিকিৎসা হতে পারে। এর উপরেই গবেষণার কাজ শুরু করেছিল উন্নত দেশগুলি।
দিল্লি শুরু করেছিল আগেই। এবার পশ্চিমবঙ্গও এগিয়ে এল ট্রায়ালে। কোভিড-১৯ এর মোকাবিলায় সম্ভাব্য সমস্ত পথই অবলম্বন করবে রাজ্য, তা জানানো হয়েছিল আগেই। নবান্নের তরফ থেকে এবার প্লাজমা থেরাপির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার সবুজ সংকেত দেওয়া হল। এখন অপেক্ষা শুধু আইসিএমআর-এর অনুমতির। দু’সপ্তাহের মধ্যেই চালু হতে পারে আক্রান্তের দেহ থেকে প্লাজমা সংগ্রহের কাজ।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে দেহে তৈরি হয় অ্যান্টিবডি। এই অ্যান্টিবডিই লড়াই করে ভাইরাসের সঙ্গে। চিকিৎসকরা, সুস্থ হয়ে যাওয়া কোনো করোনা আক্রান্তের শরীর থেকে সংগ্রহ করবেন অ্যান্টিবডি। সেই অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ রক্তরস ব্যবহার করা হবে আক্রান্ত অন্য ব্যক্তির ওপরে। চিকিৎসার পরিভাষায় এই পদ্ধতিকেই বলা হয় ‘প্লাজমা কনভালসেন্ট থেরাপি’। চিনে এই প্রযুক্তি প্রয়োগে সুফল মিললেও সঠিক কোনো সন্ধান দিতে পারেননি চিকিৎসকরা। তাই এবার গবেষণার কাজে নামলো দেশের স্বাস্থ্যসংস্থা। দিল্লি এবং কেরালার পর কলকাতাতেও শুরু হচ্ছে এই গবেষণার কাজ।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইমিউনো হেমাটোলজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে এই ট্রায়াল চলবে। প্লাজমা প্রক্রিয়াকরণের তত্ত্বাবধান করবেন, আইএইচবিটি বিভাগের প্রধান প্রসূন ভট্টাচার্য। এখান থেকেই প্লাজমা সংগ্রহ করে প্রয়োগ করা হবে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি আক্রান্তের শরীরে। নেতৃত্বে আইডি মেডিসিন বিভাগের প্রধান বিশ্বনাথ শর্মা এবং সংক্রামক রোগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর যোগীরাজ রায়।
তবে এই ট্রায়ালের আগে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখতে হবে আক্রান্তের রক্ত। যথেষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি না হলে ব্যবহার করা যাবে না তাঁর প্লাজমা। সেক্ষেত্রে বিচার্য সুস্থ হওয়া ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। আক্রান্ত সুস্থ হওয়ার কমপক্ষে ২১-২৮ দিন বাদে সংগ্রহ করতে হবে প্লাজমা। এবং ওই ব্যক্তির নমুনার দুটি কোভিড-১৯ রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তবেই কাজে লাগানো যাবে তাঁর রক্তরস।
প্রসূন ভট্টাচার্য জানান, সংগৃহীত রক্তরস প্রয়োগ করা হবে করোনা আক্রান্তদের দেহে। পাশাপাশি অন্যান্য রোগের শিকার হওয়া গুরুতর অসুস্থদের শরীরেও প্রয়োগ করা হবে এই রক্তরস। এর জন্য সমস্তরকম পরিকাঠামো এবং প্রশিক্ষণ রয়েছে মেডিক্যাল কলেজে, এমনটাই আশ্বাস দেন তিনি। শুধু দরকার, কিছু যন্ত্রপাতি এবং ডিসপোসেবল ইউনিটের।
ঘোষণার পরই এগিয়ে এসেছেন সুস্থ হয়ে যাওয়া আক্রান্তরা। হাবড়ার এক তরুণীসহ আরও অনেকে স্বেচ্ছায় এই গবেষণার শরিক হতে চেয়েছেন। এখন শুধু অপেক্ষা আইসিএমআরের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রাপ্তির।