“কোভিডের ঠিক পরের কথা। তখন অনেক সদস্য, বিশেষ করে মহিলা সদস্যরা পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করার জন্য ফুড বিজনেসে আসেন। কেউ বেকিং করতেন, কেউ আবার হোম ডেলিভারি। তবে বড়ো খাদ্যমেলাগুলোতে স্টলের যা ভাড়া, তা অ্যাফোর্ড করতে পারতেন না তাঁরা। তাঁদের একটা প্ল্যাটফর্ম দেওয়ার জন্যই আমরা ২০২১ সালে একটি ফুড ফেস্টের আয়োজন করেছিলাম।”
বলছিলেন ‘ক্যালক্যাটা ফুডিস ক্লাব’-এর (Calcutta Foodies' Club) ট্রাস্টি চন্দন গুপ্ত। প্রসঙ্গ ‘ক্যালকাটা ফুড ফেস্ট’ (Calcutta Food Fest)। ২০২১ সালে কোভিড-কালে হোম শেফদের এক ছাদের তলায় এনে অভিনব যে খাদ্যমেলার গোড়াপত্তন করেছিলেন ‘ক্যালকাটা ফুডিস ক্লাব’-এর সদস্যরা, দু’বছর পর এবার নতুন চেহারায় অথচ চেনা স্বাদ নিয়েই ফিরতে চলেছে সেই খাদ্যমেলা। আর দিন তিনেকের অপেক্ষামাত্র। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি কলকাতার শোভাবাজারের কাছেই জ্যোতিন্দ্রমোহন অ্যাভেনিউতে আয়োজিত হচ্ছে এই খাদ্য উৎসব।
অবশ্য এই মেলার কথায় যাওয়ার আগে, ‘ক্যালকাটা ফুডিস ক্লাব’-এর ইতিহাসটাও একটু বলে নেওয়ার প্রয়োজন আছে বৈকি। ২০১৪ সাল। ডঃ অগ্নিভ চক্রবর্তীর হাত ধরেই পথ চলা শুরু হয় ‘ক্যালকাটা ফুডিস ক্লাব’-এর। কলকাতার খাদ্যরসিকদের নিয়েই আস্ত একটি কমিউনিটি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। না, খাদ্যমেলা আয়োজনের কথা তখনও ভাবেননি কেউ-ই। বরং, সে-সময় ‘সিএফসি’ ছিল কেবলমাত্র একটি ফেসবুক গ্রুপ। ছিল এমন একটা মাধ্যম, যেখানে মনখুলে খানা-পিনার চর্চা করতে পারেন খাদ্যরসিকরা, তুলে ধরতে পারেন পেটপুজোর আশ্চর্য সব অভিজ্ঞতা।
জন্মলগ্নে এই ‘ডিজিটাল কমিউনিটি’-র সদস্য সংখ্যা ছিল ৫০০ জন। বাড়তে বাড়তে আজ সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লক্ষ ৫ হাজার। তাঁদের মধ্যে কেউ থাকেন বাংলায়, কেউ আবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন দেশের অন্যান্যপ্রান্তে। সদস্যতালিকায় রয়েছেন বহু প্রবাসী ও ভিন দেশের নাগরিকও। তবে খাদ্যরসিকতার মধ্যে দিয়েই তাঁরা একসূত্রে বাঁধা পড়েছেন কলকাতার সঙ্গে। বলতে গেলে, এ যেন এক আন্তর্জাতিক সংগঠনই বটে। তবে ‘ক্যালকাটা ফুডিস ক্লাব’-এর পরিচয় আজ আর কেবলমাত্র ‘ফেসবুক গ্রুপ’-এ সীমাবদ্ধ নয়, বরং এ-শহরের অন্যতম রেজিস্টার্ড চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এই সংস্থা। বাংলার বুকে সারাবছরই কোনো-না-কোনো অনুষ্ঠান লেগেই থাকে ‘ক্যালকাটা ফুডিস ক্লাব’-এর। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়েই চলছে, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ‘সিএফসি’-র দাতব্য কর্মযজ্ঞ। সেই প্রসঙ্গে না হয় বলা যাবে আরেকদিন। আপাতত ফেরা যাক আগামী ১২ তারিখের খাদ্যমেলায়।
“এবারে সবমিলিয়ে ৬০ জন শেফ স্টল দিচ্ছেন আমাদের ফুডফেস্টে। ঘটনাচক্রে এঁরা সকলেই আমাদের ক্লাবের মেম্বার”, বলছিলেন চন্দন। কথায় কথায় জানা গেল কোনো খাবারই কিনে বিক্রি করবেন না কলকাতা ফুড ফেস্টের শেফরা। মোয়া থেকে শুরু করে মিষ্টি কিংবা স্পাইসি খাবার— সবটাই হাতে তৈরি করা। চন্দনের কথায়, “আমাদের প্রতিটি ইভেন্টই কিন্তু শুধু সদস্যদের জন্যই হয়। কেবলমাত্র এই ফুডফেস্টটির আয়োজন করে মেম্বাররা, তবে দরজা খোলা রাখা হয় সর্বসাধারণের জন্য।” তাছাড়াও এই মেলায় হাজির থাকবেন শন কেনওয়ার্থি, মধুমিতা মহন্তা, বিকাশ কুমারের মতো খ্যাতনামা শেফরাও। তরুণ উদ্যোগপতিদের পরামর্শদাতা এবং পথপ্রদর্শক হিসাবেই হাজির থাকবেন তাঁরা।
সবমিলিয়ে বলতে গেলে, একদিকে যেমন এই মেলা খাদ্যরসিকদের তৃপ্তি দেবে, তেমনই ছোটো ও মাঝারি উদ্যোগপতিদেরও সুযোগ দেবে সাধারণের সামনে নিজেদের উপস্থাপিত করার— তাতে সন্দেহ নেই কোনো। বলতে গেলে, কলকাতায় খাদ্যরসিকতার বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলার ইঙ্গিত দিচ্ছে ‘ক্যালকাটা ফুডিস ক্লাব’-এর এই আয়োজন…
Powered by Froala Editor