উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় রাস্তার ধারে ঝকঝকে ক্যাফে। সাজসজ্জা থেকে পরিষেবা সবই মুগ্ধ করার মতো। তবে আর পাঁচটা সাজানো ক্যাফেটেরিয়ার থেকে এখানকার পরিবেশ একটু আলাদা। কর্মচারীদের দেখলে সেই পার্থক্য ধরা পড়ে। আসলে কেউই শারীরিক বা মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ নন। বা বলা ভালো, প্রত্যেকেই ব্যতিক্রমী। সমাজের একমুখী চলনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন না তাঁরা। আর এমনই ৫০ জন কর্মচারীকে নিয়ে হইহই করে চলতে থাকা সেই ক্যাফে হঠাৎ থমকে গিয়েছে করোনা অতিমারীতে। এখনও অবধি অনিশ্চিত ভবিষ্যত। তবে হাল ছাড়তে রাজি নন আডা’জ ক্যাফের কর্ণধার ক্যাথেলিন ফোলে। বরং এবার সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন সহনাগরিকদের কাছেই।
লকডাউনের অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আডা’জ ক্যাফে। পালো অল্টো নিবাসী ক্যাথেলিন বুঝত্তে পেরেছিলেন, ভাইরাস যদি কর্মচারীদের শরীরে প্রবেশ করে তাহলে তাঁদের বাঁচানো অনেকটাই কঠিন হবে। প্রত্যেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে যথেষ্ট দুর্বল। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের মতো প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই কারোরই। আর তাই আমেরিকায় ভাইরাসের উপসর্গ ছড়িয়ে পড়তেই ক্যাফে বন্ধ করেছিলেন তিনি।
কিছুদিন বাড়ি গিয়ে খাবার ডেলিভারির ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। অন্তত ক্যাফেটা যেন চালু থাকে। কিন্তু কর্মচারীদের বাইরে বেরোতে দিতে চান না তিনি। অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে মাঝে মাঝে কাজ চলেছে। আবার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে ক্যাফে। অবশ্য তাতে কর্মচারীদের জীবনযাত্রায় কোনো প্রভাব পড়তে দেননি ক্যাথেলিন। তাঁদের মাসোহারা কমাননি একটুও।
ক্যাথেলিনের ছেলে চার্লিও মানসিক প্রতিবন্ধী। ছোটো থেকেই স্কুলের বন্ধুদের কাছ থেকে বিদ্রুপ সহ্য করেছেন। সেভাবে সহানুভূতির চোখে দেখেননি কেউই। চার্লির জন্যই এই ক্যাফে তৈরি করেছিলেন ক্যাথেলিন। দেখতে দেখতে তার কর্মচারীর সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। এদের কারোর স্মৃতির অন্ধকার জুড়ে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের স্মৃতি। কেউ আবার অন্যান্য সমস্যা নিয়ে জন্মেছেন। প্রত্যেকের বেড়ে ওঠাই অনেকটা লড়াই করে। কিন্তু সুযোগ পেলে যে প্রত্যেকেই কাজ করতে পারেন, সেটাই প্রমাণ করেছেন ক্যাথেলিন। আজ অতিমারীর কারণে তার লাভের অঙ্কটা তলানিতে এসে ঠেকেছে। কিন্তু এভাবে আডা’জ ক্যাফেকে বন্ধ হতে দেবেন না ক্যাথেলিন। অনলাইনে তাই নানা পুরনো সামগ্রী বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। সেই লভ্যাংশ থেকেই আরও কিছুদিন যদি ক্যাফেকে বাঁচিয়ে রাখা যায়…
আরও পড়ুন
হুইলচেয়ারে বসেই ফটোগ্রাফি, ক্যামেরাকে সঙ্গী করে প্রতিবন্ধকতা জয় খড়গপুরের শুভ্র-র
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে রাজ্যের রোল-মডেল পোলিওজয়ী মায়া চক্রবর্তী