বেশ কয়েকমাস ধরেই বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলছিলেন, সারা দেশ জুড়ে এনআরসি হবেই। এবং তা আগামী লোকসভা নির্বাচন-এর আগেই। তাঁর সুরে সুর ধরেছিলেন রাজ্যস্তরের বিভিন্ন নেতাও। এরই মধ্যে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পাশ হয়ে গেল বিতর্কিত ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’ (CAB)। আগামী সপ্তাহে সংসদের দুটি কক্ষেই এই বিল পেশ করা হবে। ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’-কে এনআরসি প্রক্রিয়ার গৌরচন্দ্রিকা বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
আপাতভাবে এই বিলের প্রধান উদ্দেশ্য, ১৯৫৫ সালে পাশ হওয়ায় পুরনো নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা। কেন্দ্রের দাবি, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে ভারতে আগত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি, খ্রিস্টান ধরম্মালম্বী মানুষদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবে এই বিল। ঘটনাচক্রে, এই প্রতিটি দেশই মুসলমান অধ্যুষিত। ফলে এই বিলের বিরোধীদের প্রধান অভিযোগ, এই বিল মুসলমান-বিদ্বেষী। এখানে মুসলমান অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা নেই। ফলে ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদের সমতার অধিকারকে লঙ্ঘন করছে এই বিল। অপরদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, মুসলিম-অধ্যুষিত রাষ্ট্রে যে-সব সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় হিংসার শিকার হন, তাঁদের আশ্রয় দিতেই এই বিলের সংশোধনী আনা প্রয়োজন ছিল। বিজেপি এক্ষেত্রে সামনে রাখছে দেশভাগের ফলে অসহায় হয়ে পড়া ‘সংখ্যালঘু’-দের। যদিও বিরোধীরা এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, এই অজুহাতে মুসলমান-বিদ্বেষকেই আরও গভীরভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে বিজেপি।
তবে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে যে ফের বিতর্ক বাঁধবে তা নিশ্চিত। এর আগেও এই বিল পাশ করানোর চেষ্টা করেছিল এনডিএ সরকার। কিন্তু রাজ্যসভায় বিল পাশ করানো যায়নি। এবারে কী হবে, এখনই বলা কঠিন। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি থেকে বিলের বিরোধিতা একপ্রকার নিশ্চিত। বিজেপির জোটসঙ্গী শিবসেনা ইতিমধ্যেই বিলের বিরোধিতা করেছে। তবে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, এই বিল আসলে এনআরসি প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। দেশজুড়ে এনআরসি নিয়ে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, সেই ক্ষতয় প্রলেপ দিতেই এই বিল পাশ জরুরি হয়ে পড়েছিল। এতে ‘অভিবাসীদের’ নাগরিকত্ব দানের কথা আছে। এরই পাশাপাশি এনআরসি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া। এই দুই আপাত-বিরোধী প্রক্রিয়ার পরিণতি জনমানসে কী হবে, সেটাই এখন দেখার।