ছাপাখানার দৌলতে পুঁথি লেখার রেওয়াজ হারিয়ে গিয়েছে কয়েক শতাব্দী হল। তবু ছাপা অক্ষরের তুলনায় হাতে লেখা অক্ষরের সৌন্দর্য আজও মানুষকে আকর্ষণ করে। অক্ষর ফুটিয়ে তোলাই যে একটা শিল্প। ভাবতে অবাক লাগে, একসময় মানুষ আত বই লিখে ফেলতেন সাদা পাতার উপর রং-তুলি দিয়ে। তবে ইতিহাসের স্মরণিকা ধরে পিছিয়ে না গিয়েও তার নিদর্শন মিলতে পারে। সম্প্রতি হায়দ্রাবাদ শহরের এক যুবক নিরলস পরিশ্রমে লিখে ফেলেছেন সম্পূর্ণ কোরান।
পেশায় ক্যাব ড্রাইভার মহম্মদ আফজল। তাঁর অক্ষরপরিচয় অতি সামান্য। ছোটবেলায় শ্লেট-পেনসিলের পর আর পড়াশোনা এগোয়নি। জীবিকার প্রয়োজনে শুরু করলেন ক্যাব চালানো। এরপর আর হাতের লেখা অভ্যাস করার সময়ও হয়নি। কিন্তু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় কোরান পাঠ শুনতে শুনতে প্রায়ই মনে হত, প্রতিটি কথা যদি তিনি নিজে হাতে লিখতে পারতেন! ব্যস্ত জীবনে সেই অবসরটুকু এনে দিল সাম্প্রতিক লকডাউন। হাতে কাজ না থাকায় শুরু করলেন নতুন করে অক্ষরপরিচয়।
আফজল জানিয়েছেন, ক্যালিগ্রাফি তো দূরের কথা হাতের লেখাই কখনও অভ্যাস করেননি তিনি। লকডাউনের শুরুতেও তাঁর হাতের লেখা সুন্দর ছিল না। কিন্তু ক্রমশ অভ্যাস করতে করতে সেই অক্ষর সুন্দর হয়ে উঠতে থাকল। আর এর মধ্যেই এসে পড়ল রমজান মাস। তখনই কোরান লেখার কাজে হাত লাগালেন তিনি। আর মাত্র ৬ মাসের চেষ্টাতেই পুরোটা লিখে ফেললেন।
সামান্য অক্ষরপরিচয়কে সম্বল করে সমস্ত কোরান লিপিবদ্ধ করতে পেরে খুশি আফজল। আর কাজ শেষ করেই সেই বই নিয়ে হাজির স্থানীয় মুফতি সাদিক মহিউদ্দিনের কাছে। তিনিও আফজলের স্বধর্মে শ্রদ্ধা দেখে খুশিই হয়েছেন। তবে ধর্মীয় বিষয়ের বাইরে গিয়েও বলা যায়, একসময় ভারতের বুকেই যে অক্ষরশিল্প প্রভূত উন্নতি লাভ করেছিল, তারই একটা নমুনা যেন মূর্ত হয়ে উঠল আফজলের কাজে। ছাপাখানার ধাতব পাতের নিচে সেই শিল্প পুরোপুরি চাপা পড়ে যায়নি।
Powered by Froala Editor