সালটা ১৯৩০। ‘রামন এফেক্ট’-এর জন্য বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন সিভি রামন। প্রথমবার ভারত একজন নোবেলজয়ী বৈজ্ঞানিককে পেল। এই যাবতীয় সময় একদম পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন আরও একজন, যিনি এই গবেষণার অন্যতম একটি অংশ ছিলেন। পরবর্তীকালে ভারতে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাঁরও অবদান স্বীকৃত। তিনি, বৈজ্ঞানিক কে এস কৃষ্ণণ।
১৮৯৮ সালে তামিলনাড়ুর সাধারণ এক কৃষক পরিবারে জন্মেছিলেন কৃষ্ণণ। অবস্থাপন্ন না হলেও, ঘরে শিক্ষা-সংস্কৃতি চর্চার একটা পরিবেশ ছোট থেকেই পেয়ে এসেছিলেন তিনি। তবে বিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসার শুরু নবম শ্রেণী থেকে। স্কুলের এক শিক্ষকের কথা বারবার কৃষ্ণণের স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে, যিনি বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তারপর, অজানা এক জগতের দিকে ডুব দেওয়া শুরু হয় তাঁর। পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর পাশ করার পর কৃষ্ণণ চলে আসেন কলকাতায়। ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কালটিভেশন অফ সায়েন্সের সঙ্গে যুক্ত হন। আর সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ সিভি রামন। গুরু-শিষ্য একসঙ্গে নানা গবেষণার কাজ চালাতে থাকেন। সেখানেই আবিষ্কার হয় ‘রামন এফেক্ট’-এর। কৃষ্ণণের কথায়, “Festive season in my Science life”।
শুধু রামন এফেক্ট নয়, পদার্থবিদ্যার নানা বিষয় নিয়ে তাঁর গবেষণা জাতীয়-আন্তর্জাতিক স্তরে সমাদৃত হয়েছে। বিশেষ করে চুম্বকীয় তত্ত্বের ওপর কাজ তাঁকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে। স্বাধীনতার পর, ১৯৪৮ সালে দেশের প্রথম জাতীয় গবেষণাগার ‘ন্যাশনাল ফিজিকাল ল্যাবরেটরি’ তৈরির পর, কৃষ্ণণকে সেখানকার প্রথম ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত করেন স্বয়ং জওহরলাল নেহরু। পরবর্তীকালে রয়্যাল সোসাইটির ফেলোশিপ, পদ্মভূষণ, ভাটনগর পুরস্কার ইত্যাদি বিভিন্ন সম্মানে সম্মানিত হন তিনি।
তবু, দিনের শেষে কোথাও যেন যোগ্য সম্মান থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেলেন। আপাতভাবে বিভিন্ন পুরস্কারে সম্মানিত হলেও, এই প্রশ্ন উঁকি দিয়েই যায় – রামনের সঙ্গে তিনিও কি নোবেলের সমান দাবিদার ছিলেন না?