স্কুলছুট পড়ুয়াদের ফেরাতে দিল্লির রাস্তায় ‘বাস স্কুল’

করোনা অতিমারীর জেরে বন্ধ সমস্ত স্কুল। ইচ্ছে থাকলেও পড়ুয়ারা ক্লাসরুমে যেতে পারছে না। আর অনলাইনে পড়াশোনা করার সুযোগও তো সবার কাছে নেই। ফলে একরকম বন্ধই আছে সব। সারা দেশজুড়েই এখন ছবিটা প্রায় একইরকম। শুধু কোথাও কোথাও গড়ে উঠেছে ব্যতিক্রমী উদ্যোগও। ঠিক যেমন দিল্লিতে শুরু হয়েছে বাসের মধ্যে স্কুল। পড়ুয়ারা স্কুলে যেতে পারছে না তো কী হয়েছে? স্কুল নিজেই বাসে চড়ে হাজির হবে পড়ুয়াদের দোরগোড়ায়। এভাবেই কয়েকশো পড়ুয়ার পঠনপাঠন টিকিয়ে রেখেছে দিল্লির বাস-স্কুল।

আজ থেকে ৭ বছর আগে দিল্লিতে তৈরি হয়েছিল ব্যতিক্রমী এই কমিউনিটি স্কুল, হোপ। তেজস এশিয়া নামের একটি এনজিও-র উদ্যোগে গড়ে ওঠে হোপ। উদ্দেশ্য ছিল শহরতলির প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে নূন্যতম শিক্ষা পরিকাঠামো নেই, সেখানে পৌঁছে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষাটুকু প্রদান করা। প্রতিদিন শহর থেকে ৪টি বাস বেরিয়ে পড়ত শহরতলির উদ্দেশে। তার মধ্যে কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্গে থাকত পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সরঞ্জাম। যেমন স্লেট-পেন্সিল, বই ইত্যাদি। আর থাকত পড়ুয়াদের জন্য রান্না করা খাবার। আসলে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা যে দুবেলা পেটভরে খেতেই পায় না। আর খালি পেটে কি পড়াশোনা হয়?

এভাবেই চলছিল। একটু একটু করে হোপের জনপ্রিয়তাও বাড়ছিল। পড়ুয়াদের কারোর পরিবারেই প্রায় শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই। তাই শুরু করতে হত একেবারে অক্ষরপরিচয় থেকে। এরপর বাছাই করা কিছু পড়ুয়াকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করে দেওয়ার ব্যবস্থাও করতেন হোপের স্বেচ্ছাসেবকরা। তবে করোনা অতিমারীর ধাক্কায় প্রাথমিকভাবে এই কমিউনিটি স্কুলও বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম তরঙ্গের পরেই এসে গেল দ্বিতীয় তরঙ্গ। ফলে সরকারি নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরাও সন্দিহান ছিলেন, আদৌ এভাবে পড়াশোনা চালানো সম্ভব হবে কিনা। তবে জুলাই মাসের শুরুতে আবার সমস্ত নিরাপত্তা মেনেই পথে নামল ৪টি বাস। নিয়ম করে পৌঁছে যেতে থাকল শহরতলির ৮টি অঞ্চলে।

এই একমাসে স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়েছে অনেকটাই। এমনকি বাসের সংখ্যা বাড়ানোর কথাও ভাবছে তেজস এশিয়া সংস্থা। এখন কিন্তু শুধুই স্কুলে পড়ার সুযোগ না পাওয়া পড়ুয়ারাই নয়, বরং যারা স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন তারাও এসে জুটেছে। অনেকের কাছেই যে অনলাইন পড়াশোনার সরঞ্জাম নেই। ইতিমধ্যে এনজিও কর্মীরা বিভিন্ন এলাকা ধরে সেইসমস্ত পড়ুয়াদের শণাক্ত করার কাজও শুরু করে দিয়েছে। নতুন নতুন এলাকাতেও যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এভাবে হয়তো সম্পূর্ণ শিক্ষাপরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। কিন্তু পড়াশোনা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়েও তো থাকতে হবে না পড়ুয়াদের। আগামীদিনে স্কুল খুললে যাতে তারা আবার মূল স্রোতে ফিরে আসতে পারে, সেটাই লক্ষ হোপের স্বেচ্ছাসেবকদের।

আরও পড়ুন
বদলে যাচ্ছে ইতিহাস পাঠ্যক্রম, এনসিইআরটি ও ইউজিসি’র সিদ্ধান্তে সরব ইতিহাসবিদরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
দেশের ১৪টি কলেজে মাতৃভাষায় ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠ, থাকছে বাংলাও