বোল্টের ‘রেকর্ড’ ভাঙলেন কর্নাটকের নির্মাণকর্মী, সত্যিই কি দ্রুততম তিনি?

পেশায় নির্মাণকর্মী। সারাবছর রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কখনো ইঁট গাঁথেন, কখনো সিমেন্টের মিশ্রণ তৈরি করেন। তার সঙ্গেই, মাঝে মাঝে জলকাদা টপকে দুদিকে দুটো মোষ সঙ্গে নিয়ে দৌড়। আসলে এক উৎসব। নাম, কাম্বালা। এই দৌড়ই বদলে দিল সেই নির্মাণকর্মীর জীবন। উসেইন বোল্টের থেকেও দ্রুত দৌড়ে, ‘রেকর্ড’ তৈরি করলেন তিনি।

কর্নাটকের কন্নড় জেলার দরিদ্র গ্রামবাসী শ্রীনিবাস গৌড়া। ২৮ বছরের শ্রীনিবাস বছরে এক-আধদিন গ্রামবাসীরা মেতে ওঠেন উৎসবের আনন্দে। আর কর্নাটকের এইসব গ্রামের মানুষদের উৎসব মানেই তাতে ‘কাম্বালা’ থাকবেই। এই খেলায় দীর্ঘদিন ধরেই মানুষের মনোরঞ্জন করে আসছেন শ্রীনিবাস। কিন্তু এই খেলাই যে তাঁর জীবন বদলে দেবে, তা আর কে জানত?

দৌড়ে প্রথম, সে তো শ্রীনিবাস প্রায়ই হয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর পারফরমেন্স রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে। কারণ তিনি নাকি জামাইকান অ্যাথলিট উসেইন বোল্টের বিশ্বরেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। ২০০৯ সালে ব্রিটেন চ্যাম্পিয়নশিপে ৯.৫৮ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড়ে রেকর্ড তৈরি করেছিলেন বোল্ট। আর শ্রীনিবাস সেই দূরত্ব অতিক্রম করেছে মাত্র ৯.৫৫ সেকেন্ডে। বোল্টের থেকেও যা ০.০৩ সেকেন্ড কম।

স্বাভাবিকভাবেই শ্রীনিবাসের এই পারফরমেন্সকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। উপযুক্ত সুযোগ ও প্রশিক্ষণ পেলে তিনি যে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারবেন, এই কথাই বলছেন সবাই। তাঁকে নিয়ে ট্যুইট করেছেন শশী থারুর এবং মহিন্দ্রা গ্রুপের কর্ণধার আনন্দ মহিন্দ্রা। তাঁকে অলিম্পিকে সুযোগ দিয়ে দেশের জন্য আরেকটা সোনা চেয়ে ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেন রিজিজুর কাছে আবেদন করেছেন তাঁরা। আর সেই কথায় সারা দিয়েছেন ক্রীড়ামন্ত্রীও। বেঙ্গালুরুতে প্রাথমিক ট্রায়ালের জন্য তাঁকে ডেকেছেন স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার আধিকারিকরা।

তবে, এ-নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নও তুলেছেন অনেকেই। কাম্বালা মূলত মোষের দৌড়। মোষের দৌড়ের সূত্রেই দৌড়োয় মানুষও। সেখানে, মোষের সঙ্গে মানুষের দৌড়ের তুলনা করা কি আদৌ যুক্তিযুক্ত? উসেইন বোল্টের দ্রুততা যেখানে ঘণ্টায় ২৭.৮ মাইল, সেখানে একটি মোষ ঘণ্টায় ৩৫ মাইল বেগে দৌড়োতে পারে। শ্রীনিবাস গৌড়ার ‘স্পিড’ আসলে মোষেরই দৌড়ের ফল। ফলে, তাঁর সঙ্গে বোল্টের তুলনা যে আসলে মানুষের ‘আবেগের বহিঃপ্রকাশ’ ছাড়া কিছুই নয়, তা মনে করছেন অনেকে।

তবে এইসব বিতর্ক সত্ত্বেও বিন্দুমাত্র ক্ষুণ্ণ হয় না শ্রীনিবাসের কৃতিত্ব। দেশের আনাচে কানাচে অবহেলায় পড়ে রয়েছে তাঁর মতো আরও অনেক প্রতিভাই। উপযুক্ত সুযোগ পেলেই তাঁরা নিজেদের প্রমাণ করতে পারতেন। আপাতত শ্রীনিবাসের দিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই। কাঁচা রাস্তায় জলকাদা পেরিয়ে যে রেকর্ড তৈরি করেছেন শ্রীনিবাস, প্রতিযোগিতার মাঠে সিন্থেটিক ঘাসের কার্পেটে কি তার প্রতিফলন ঘটাতে পারবেন তিনি? তাঁর সাফল্য তো এখন আর তাঁর একার নয়। সঙ্গে সারা দেশের সম্মান যে জড়িয়ে গেছে তাঁর অজান্তেই। কাম্বালার মাঠে উপস্থিত জনতাই শুধু নয়, তাঁর দিকে দেশের প্রতিটা মানুষ তাকিয়ে আছেন।

Latest News See More